প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিনসহ ছয়জনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ রোববার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) নিজাম উদ্দিন ফকির।
রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামি হলেন আল আমিন আজাদ, রাকিবুল হাসান, হাসিবুল হাসান, নাহিদ হাসান ও রাজু আহমেদ।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রমনা থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মাহবুবা নাসরিনসহ ছয়জনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। একই সঙ্গে তাঁদের পুনরায় ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২১ জানুয়ারি প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানী থেকে মাহবুবা নাসরিনসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইসের (প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহার করা হয়) মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এই জালিয়াতি করে আসছে। গত ১০ বছরে অন্তত ১৮টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে চক্রটি। এভাবে বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হয়েছেন চক্রের সদস্যরা। এই চক্রের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ব্যাংক, রেলওয়ে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৮ প্রার্থীর সঙ্গে টাকার চুক্তি করেছিল চক্রটি। তাঁদের মধ্যে ১২ জন চাকরি প্রার্থীর নাম পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। ওই ১২ জনের একজন হচ্ছেন মাহবুবা নাসরিনের আপন ভাই মো. রানা।
ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বরখাস্ত সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। একজনের ব্যাংক হিসাব যাচাই করে বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান ও নোমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। আর পলাতক জহিরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই রাজু আহমেদ পরিচালনা করেন আরেকটি চক্র। ২০১৯ সালের দিকে জহিরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় মাহবুবা নাসরিনের। এর আগে ইডেন মহিলা কলেজের এক বান্ধবীর মাধ্যমে মাহবুবার পরিচয় হয়েছিল আরেকটি চক্রের হোতা নোমান সিদ্দিকীর সঙ্গে। পরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এই দুই গ্রুপকে একত্র করে একটি চক্র হিসেবে কাজ শুরু করেন তাঁরা।