করোনার নমুনা সংগ্রহ

প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট রেখে মাঠে নামানো হচ্ছে সিএইচসিপিদের

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রশিক্ষিত ২৫ থেকে ৩০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কাজে না লাগিয়ে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের (সিএইচসিপি) দিয়ে নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) এ সম্পর্কিত একটি চিঠি ইস্যু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর সহদেব চন্দ্র রাজবংশী সারা দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের এই চিঠি দিয়েছেন।

ওই চিঠিতে সহদেব চন্দ্র রাজবংশী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রান্তিক জনসাধারণের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক লেভেলে নমুনা সংগ্রহ করার প্রয়োজন হতে পারে।’ চিঠিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী একদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. আলমাছ আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে এই মুহূর্তে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বেকার আছেন। তাঁরা কাজ করতে আগ্রহী। তাঁদের বাদ দিয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির টেকনিশিয়ান ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। প্রথমত, তাঁরা সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হতে পারেন, দ্বিতীয়ত, নিজেরা আক্রান্ত হয়ে রোগ ছড়াতে পারেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা এই কাজের জন্য প্রশিক্ষিত। তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজিস্ট থেকে পাস করা। তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে একদিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্য লোকজনকে কাজে লাগানোর কি কারণ তা বোধগম্য নয়।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। অ্যানাটমি (শারীরবিদ্যা) ও ফিজিওলজির ভালো জ্ঞান যাদের নেই তাদের জন্য নমুনা সংগ্রহ কঠিন হবে। এ নিয়ে কথা হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন রেফারেল সেন্টারে (এনআইএলএমআরসি) কর্মরত মুহাম্মাদ মাহবুব হাসানের সঙ্গে। করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কাজে যুক্ত আছেন তিনি। মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা এই মুহূর্তে উপসর্গ দেখা দেয়নি এমন ব্যক্তি, আক্রান্ত হয়েছেন এমন, সংকটজনক এবং মৃত এই চার ধরনের মানুষের নমুনা সংগ্রহ করছেন।

নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি কেমন— এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হাসান বলেন, মানুষের আলজিবের পেছনে ন্যাজোফ্যারিনজিয়াল ওয়াল আছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা রোগীর সম্মতির ভিত্তিতে নাক বা মুখের ভেতর একটি সোয়াব স্টিকের ডগায় তুলা দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। মুখের ভেতর সোয়াব স্টিক ঢোকালে অনেক সময় রোগী কেশে ফেলেন। তখন টনসিল ফুলে যায় এবং মুখের হাঁ ছোট হয়ে আসে। এতে করে ন্যাজোফ্যারিনজিয়াল ওয়ালটা ঠিকমতো দেখা যায় না। একইভাবে নাক থেকে যখন সোয়াব স্টিক দিয়ে নমুনা নেওয়া হয় তখন অনেকে হাঁচি দিয়ে ফেলেন। তাই নমুনা সংগ্রহ করতে হয় খুব সতর্কভাবে। নমুনা নেওয়ার পর ভাইরাস ট্রান্সপোর্ট মিডিয়ায় (ভিটিএম) নিয়ে কুল বক্সে করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়। যেখানে ভিটিএম নেই সেখানে স্যালাইনে সোয়াব স্টিক ডুবিয়ে রাখা হয়। ঠিকভাবে পরীক্ষাটা না হলে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

তা ছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগী মেডিকেল টেকনোলজিস্টের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো সুস্থ নাও থাকতে পারেন। তাঁর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কণ্ঠনালীর ভেতরে ট্রাকিয়া থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হতে পারে।

বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন গত ৩১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর করোনাভাইরাস শনাক্তের কাজে যুক্ত হওয়ার আবেদন জানান। ওই চিঠিতে তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। তবে এখনো পর্যন্ত অধিদপ্তর তাঁদের আবেদনে সাড়া দেননি।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে সারা বাংলাদেশে আটটি সরকারি ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজিস্ট রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর শিক্ষার্থীরা তিন বছরের তত্ত্বীয় ও এক বছরের কারিগরি প্রশিক্ষণ শেষে সনদ পান। শেষের এক বছর তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করে থাকেন।

গত ১২ বছর সরকারিভাবে কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যাঁরা পাস করেছেন তাঁরা দেশের বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের এখনো নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও অনেক লোক লাগতে পারে। যেহেতু সিএইচসিপিরা প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করে সে জন্য তাদের প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।