অধিকাংশ প্রবাসী তাঁদের আয়ের প্রায় পুরোটা ব্যয় করেন অনুৎপাদনশীল খাতে। দেশে ফেরার পর তাঁরা আয়হীন হয়ে বিপাকে পড়েন।
■ সরকার দেবে ৫% প্রণোদনা
■ বছরে লাগবে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা
■ অর্থমন্ত্রীকে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর চিঠি
প্রবাসীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলের মতো একটি সঞ্চয় স্কিম চালুর কথা ভাবছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কোনো প্রবাসী কর্মী দেশে পাঠানো টাকার ১০ শতাংশ এই সঞ্চয় স্কিমে জমা রাখলে সরকার তাঁর হিসাবে চলমান ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ মিলিয়ে ৫ শতাংশ টাকা যুক্ত করে দেবে। যাঁরা এই সঞ্চয় স্কিমে যুক্ত হবেন না, তাঁরা বর্তমানের মতো ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন।
মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে করোনা মহামারির মধ্যে, যখন দেশে ফেরার পর প্রবাসী কর্মীদের অসহায়ত্বের চিত্রটি বড় করে সামনে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) ফর মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স’ নাম দিয়ে স্কিমটির একটি ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। এটি গত ২৮ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। ধারণাপত্রটি তৈরি করেছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল রোববার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় তাঁর কাছে এখনো যায়নি।
প্রতিবছর গড়ে সাত লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে যান। আবার অনেকেই চুক্তি শেষে, কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বা কাজ হারিয়ে ফিরে আসেন। অধিকাংশই দেশে এসে কোনো কাজে যুক্ত হতে পারেন না। ওদিকে বিদেশে আয় করা টাকার প্রায় পুরোটাই খরচ হয় পরিবারের ভরণপোষণ ও ঘরবাড়ি নির্মাণে।
ধারণাপত্রে বলা হয়, প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর্মীরা তাঁদের পাঠানো টাকার ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত জমা করতে পারবেন। তিন থেকে পাঁচ বছরের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকবে। তবে চাইলে এক বছর পর প্রবাসী কর্মী টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। জমা টাকার সুদও পাবেন তাঁরা।
প্রস্তাব করা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১৩ শতাংশ সুদ দেয় সরকার। প্রবাসীদের জন্যও একই সুদ চালু করা যেতে পারে। তবে যেহেতু ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে, তাই সুদের হার ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে রাখাটা ভালো হবে। ধারণাপত্রে বলা হয়, কর্মী চাইলে যেকোনো সময় আংশিক বা পুরো টাকা তুলে নিতে পারবেন। টাকা তোলার আবেদন জমা দেওয়ার পর তা দিতে কোনোভাবেই ১৫ দিনের বেশি সময় নেওয়া যাবে না।
ধারণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রবাসীদের পাঠানো টাকা থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমার অংশ কেটে নেওয়া হবে। এটি ঐচ্ছিক বা বাধ্যতামূলক হতে পারে। তবে শুরুতে এটি ঐচ্ছিক রাখা যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, একে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের উদ্যোগ বিবেচনা করে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে। এতে প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমবে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সব প্রবাসীর জন্য ভবিষ্য তহবিল করা হলে ৫ শতাংশ প্রণোদনা বাবদ বছরে সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে। এখন বছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত লাগবে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে ভালো করে বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ দেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার জাতীয় পেনশন স্কিম নিয়ে কাজ করছে। এর বাইরে খণ্ড খণ্ড স্কিম হলে তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দেবে।
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর চিঠি
অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, কোনো প্রবাসী কর্মী দেশে পাঠানো টাকার ১০ শতাংশ সঞ্চয় স্কিমে জমা রাখলে সরকার সেখানে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। তার মানে, একজন প্রবাসী দেশে ১০০ টাকা পাঠালে তাঁর সুবিধাভোগী ৯০ টাকা পাবেন। বাকি ১০ টাকা তাঁর সঞ্চয়ী হিসাবে জমা হবে। এর সঙ্গে সরকারি প্রণোদনার ৫ টাকা যুক্ত হয়ে ১৫ টাকা তাঁর নামে জমা থাকবে।
প্রবাসীদের কল্যাণে এটি খুব ভালো প্রস্তাব বলে মনে করছেন অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, কর্মী ফিরে এলে তাঁর পুনরেকত্রীকরণে এটি সহায়তা করবে।
তবে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে অংশগ্রহণ করাটা কঠিন হবে। তাই প্রাথমিকভাবে শুধু প্রবাসীদের জমা টাকার ওপর সঞ্চয়পত্রের মতো ভালো সুদ দিয়ে এটি চালু করা যেতে পারে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রস্তাবটি ভালো।