কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় লালমনিরহাটের আদিতমারী ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষায় ১৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই পরীক্ষা শুরু হয়।
গত বুধবার দুপুরে ওই ১৫ শিক্ষার্থী কলেজে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসে জানতে পারেন, তাঁদের ফরম পূরণ করা হয়নি বিধায় প্রবেশপত্র আসেনি। এই কলেজ থেকে চলতি বছর ডিগ্রি পাস কোর্স প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৪৭ জন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র এসেছে। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল মোট ১৬২ শিক্ষার্থীর।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাটের আদিতমারী ডিগ্রি কলেজে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রি পাস কোর্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশ নিতে চার মাস আগে ফরম পূরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, তাঁরা সময়মতো টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণ করেনি।
এদিকে পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র না পাওয়ায় গত বুধবার সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করেও অধ্যক্ষের দেখা পাননি। বুধবার সন্ধ্যার দিকে অধ্যক্ষ ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জোর দাবি জানান। তাঁদের দাবির সঙ্গে অভিভাবকেরাও একাত্মতা ঘোষণা করেন। কিন্তু এ সময় অধ্যক্ষ সুষ্ঠু কোনো সমাধান না দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
প্রবেশপত্র না পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আলমগীর হোসেন, শরীফুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, পল্লব কুমারসহ আরও অনেকে অভিযোগ করেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাঁদের জীবন থেকে একটি বছর ঝরে গেল। এই এক বছরের দায়িত্ব কে নেবেন, সে প্রশ্ন করেন তাঁরা।
পরীক্ষার্থী লাইলী খাতুনের মা জেন্না খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক কষ্টে মোর ছোট ছাওয়াটার পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা জোগাড় করিছিনুন। তোমরা যেভাবে পান মোর ছাওয়ার পরীক্ষার ব্যবস্থা করি দেন।’
কলেজ প্রতিষ্ঠাতার ছেলে ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, কলেজের ৭০ জন পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার পরও প্রবেশপত্র আসে এর মধ্যে ৫৫ জনের। বাকি ১৫ জনের প্রবেশপত্র কেন আসেনি তা অধ্যক্ষই ভালো বলতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ওই পরীক্ষার্থীদের পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
ফারুক ইমরুল বলেন, প্রতিষ্ঠাতার ছেলে হওয়ায় দরিদ্র পরিবারের কিছু শিক্ষার্থী সাশ্রয়ের আশায় তাঁর কাছে প্রতিবছরই ফরম পূরণের টাকাটা দেন। তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষকে পরে সেটা বুঝিয়ে দেন। এবারও এ রকম ৭০ শিক্ষার্থী তাঁদের ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছিলেন তাঁর কাছে। এখান থেকেই ১৫ জন বাদ পড়ে।
এ বিষয়ে কথা বলতে অধ্যক্ষ আজিজার রহমানের মুঠোফোনে গত বুধবার একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনের অপর প্রাপ্ত থেকে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। এ প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে সংযোগ কেটে দেওয়া হয়।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে জানার পর আদিতমারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ওই সব পরীক্ষার্থী বা তাঁদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনিও অধ্যক্ষকে চেষ্টা করেও পাননি। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কলেজের শিক্ষক কেরামত আলী তাঁকে জানিয়েছেন, ১৫ শিক্ষার্থী বাদে বাকিরা পরীক্ষা দিচ্ছেন।