মিয়ানমার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক। কক্সবাজার সৈকতের একটি হোটেলে গতকাল শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক আন্তেনিও ভিতোরিনো।
এর আগে জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানদের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে তারা কক্সবাজার থেকে সড়কপথে উখিয়ার বালুখালী শিবির পরিদর্শনে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তারা বালুখালী-২, কুতুপালং, মধুরছড়া, জুমশিয়া রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে। বেলা দেড়টার দিকে তারা কক্সবাজারে ফেরে।
শিবির পরিদর্শনের সময় দুই বছর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল। এ সময় রোহিঙ্গারা বলে, তারা মিয়ানমারে ফিরতে চায়। তবে সে দেশে তাদের নিরাপদ বসবাসের নিশ্চয়তা ও নাগরিকত্ব দিতে হবে। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, আন্তোনিও ভিতোরিনো ও মার্ক লোকক। তাঁরা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘর্ষের কারণে মিয়ানমারের রাখাইনের পরিবেশ উত্তপ্ত। এই পরিবেশ রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কখন হবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরও নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।
মার্ক লোকক বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য যে চুক্তি হয়েছে, সেই অনুযায়ী মিয়ানমার কাজ করছে না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে। তবে আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছি যে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
আইওএমের মহাপরিচালক আন্তোনিও ভিতোরিনো বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের ওপর নির্ভর করে। তবে বর্ষা মৌসুমসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই দ্বীপটি বাসযোগ্য করে তোলা প্রয়োজন।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কখন শুরু হচ্ছে—এই মুহূর্তে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কারণ, রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিধস থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ রাখতে হবে। এদিকে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়টি রোহিঙ্গাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। তবে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব মিয়ানমারের ওপর। জাতিসংঘ মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।