নতুন আইন অনুযায়ী শুধু মেয়র পদে প্রথমবারে মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌর নির্বাচন। কিন্তু রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর নির্বাচনে প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে ভোট চাইতে গিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। ভোটারদের মধ্যে অনেকেই দলীয় প্রতীকের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আবার কারও কাছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়টি এখন অজানা।
জানতে চাইলে বালুয়াভাটা গ্রামের ভোটার আবুল কাশেম (৪১) বলেন, ‘এটা ফির কেঙ্কা কথা! নৌকা, ধানের শীষ, নাঙল (লাঙল) নিয়া ভোটোত দাঁড়ায় এমপিরা, খালেদা, হাসিনা আর এরশাদ। এই ছোটো ভোটোত (পৌর নির্বাচনে) বড় মার্কা দিয়া হাসিনার ভোট করাটা কি ঠিক হওচে? এতে তো মার্কারও (প্রতীকের) সম্মান কমি যাইবে।’
ওই গ্রামের একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘আমরা বুদ্ধিজীবী নই। রাজনীতিও করি না। কিন্তু এটা বুঝি, নৌকা, ধানের শীষ, লাঙল—এসব প্রতীক সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের অহংকার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এগুলো দেশের সাধারণ মানুষের মনে ঠাঁই পেয়েছে। অথচ ওই প্রতীকগুলো মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা কতটা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে, তা ভাবনার বিষয়। এটাতে সরকার ও সংসদ সদস্যরাই বা সায় দিলেন কীভাবে? তাহলে এমপি, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেয়রদের পদমর্যাদা কি সমান?’
শাহাপুর গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, ‘এই পোরতোম আপনের মুখে শোনোচি নৌকা, ধানের শীষ ও নাঙ্গল মার্কাত ভোট হইবে। কিন্তুক এইগলা (এই) ভোটোত উগলা মার্কা ক্যান?
গতকাল ধানের গোছা হাতে নিয়ে পৌরসভার ফেচকিপাড়া গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা চালান বিএনপির মেয়র প্রার্থী পরিতোষ চক্রবর্তী। এ সময় ভোটার ইদ্রিস আলী (৫২) তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘স্যার, হাতোত ধানের শীষ ক্যান? এটা তো এমপি ভোট নোয়ায়।’ জবাবে পরিতোষ চক্রবর্তী তাঁকে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘মোরতো বাহে এবার ধানের শীষ মার্কা।’ এ কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন ওই ভোটার। তাঁরা বলেন, ‘এই ভোটোত ফির এত বড় মার্কা!’
ভোটারদের ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, এবারে দলীয় প্রতীকে প্রথম পৌর নির্বাচন হওয়ায় প্রতীক নিয়ে মানুষের নানা কৌতূহল, নানান কথা। ভোটাররা এতে বিস্ময়ও প্রকাশ করছেন। অনেকেই বলছেন, ধানের শীষ, নৌকা, লাঙল প্রতীক দিয়ে ছোট নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী উত্তম কুমার বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। আগের নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে না হলেও প্রার্থীদের প্রতি দলের সমর্থন থাকত। চেয়ারে বসলে মানুষ জানত ওমুক দলের লোক। কাজেও তার প্রমাণ মিলত। তাছাড়া আগে ছিলাম নৌকার কর্মী আর এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করায় নিজেকে মনে হচ্ছে নৌকার নেতা।’