করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট দেওয়াসহ নানা অভিযোগে সিলগালা হওয়া রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) প্রতারণা করেছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. সাহেদ করিমের বিষয়ে আগে অবহিত ছিল না।
আজ শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কিছু ব্যাখ্যা দিয়ে এ দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার বিষয়ে কিছু আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. সাহেদ করিমের বিভিন্ন প্রতারণার খবরও বেরিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার বিষয়ে আগে অবহিত ছিল না। এ বছরের মার্চে আকস্মিকভাবে দেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড রোগী ভর্তি করতে চাইছিল না। আবার অনেক রোগীর পছন্দ থাকত বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক। এমন সময় রিজেন্ট হাসপাতাল ঢাকার উত্তরা ও মিরপুরের দুটি ক্লিনিককে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ডেডিকেটেড করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এর পরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। তবে ক্লিনিক দুটি পরিদর্শনের সময় চিকিৎসার পরিবেশ উপযুক্ত দেখতে পেলেও ক্লিনিক দুটির লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা সৃষ্টির মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অপর বেসরকারি হাসপাতালেগুলোকেও উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে ২১ মার্চ সমঝোতা স্মারক সই করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমঝোতা স্মারক সই করার আগে পরিচয় থাকা তো দূরের কথা, টক শো ছাড়া কখনো মো. সাহেদ করিমকে দেখেননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তবে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর মো. সাহেদ বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসেছিলেন। এ সময় মো. সাহেদ তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির যোগাযোগ আছে এবং তাঁর ক্লিনিকগুলোতে কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির কোভিড আক্রান্ত আত্মীয় ভর্তি আছেন, সেসব কথা বলার চেষ্টা করতেন। গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রে রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে কিছু অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গোচরে এসেছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জুলাই আকস্মিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে র্যাব যৌথ অভিযান চালায়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে অধিদপ্তরের অবস্থান পরিষ্কার। একটি মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতারিত হয়েছে এবং ৭ জুলাই আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সমঝোতা স্মারকের আর কোনো মূল্য নেই। এ প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা আইনের অধীনে যথাযথ শাস্তি পাবে বলে প্রত্যাশা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় এবং নিজস্ব উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঝটিকা পরিদর্শন কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে, যা চলমান থাকবে।
জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপেরও স্বত্বাধিকারী। ওভাল গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ২০১৮-এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। কোভিড সংকট শুরু হওয়ার পরই আরিফুল চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানান, জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সমন্বয়ক। জেকেজি গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। এসব বুথের মাধ্যমে পিসিআর পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিসিআর ল্যাবরেটরিগুলোতে সরবরাহ করা হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকারকে কোনো অর্থ দিতে হবে না। ধারণাটি ভালো এবং কোভিড পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, এই বিবেচনা থেকে ওভাল গ্রুপের সঙ্গে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় জেকেজি গ্রুপকে অনুমতি দেওয়া যায় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনে হয়। পরে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজি গ্রুপের বুথ পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে। জেকেজি প্রতারণা করতে পারে, এমন ধারণা আদৌ ছিল না।