কক্সবাজার-৩ আসন

প্রচারণায় সমানে সমান

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ হাইস্কুল মাঠে গতকাল বিকেলে ধানের শীষের সর্মথনে বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজলের জনসভা। প্রথম আলো
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ হাইস্কুল মাঠে গতকাল বিকেলে ধানের শীষের সর্মথনে বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজলের জনসভা।   প্রথম আলো

আগামী রোববার নির্বাচন। সারা দেশের মতো কক্সবাজার-৩ আসনেও জোরেশোরে টের পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনী উত্তাপ। শেষ মুহূর্তে এ আসনে নৌকা আর ধানের শীষের প্রচারণা এখন জমজমাট।

গতকাল বুধবার বিকেলে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ হাইস্কুল মাঠে ধানের শীষের জনসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজল। তিনি বক্তব্যে তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মিথ্যা মামলা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের এলাকাছাড়া করাসহ ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন। এ সময় তিনি ঈদগাঁওকে উপজেলায় রূপান্তরসহ উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতিও দেন।

আজ বৃহস্পতিবার একই স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের জনসভা হওয়ার কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে নৌকার পথসভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে রামুর ছাত্রলীগ নেতা তাজউদ্দিন রাসেলের মৃত্যুর কারণে গতকাল দিনে প্রচারণায় নামেননি সাইমুম সরওয়ার কমল। তবে রাতে কক্সবাজার পৌরসভার কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন তিনি।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এর আগে হামলা, মামলা এবং গ্রেপ্তার আতঙ্কে তাঁরা আত্মগোপন ছিলেন। কক্সবাজার পৌরসভা, রামু ও কক্সবাজার সদরের কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রচারণা চলছে সমানে সমান। কিছু এলাকার লাঙ্গল প্রতীকের প্রচারণাও চোখে পড়ে।

রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার রাতে নৌকার পথসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল। সংগৃহীত

বিএনপি নেতারা বলেন, তাঁরা গণসংযোগ ও পথসভা করছেন কৌশলে। আগে পথসভা ও গণসংযোগের এলাকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগেভাগে প্রচার করা হতো। এখন সভার এক ঘণ্টা আগে মুঠোফোনে বলা হচ্ছে।

কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৯৬ আসন, কক্সবাজার-৩। এ আসনের হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪৪ ও রামুতে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৮৬ জন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাড়ি রামুতে। বিএনপির প্রার্থীর বাড়ি কক্সবাজার সদরে। এ আসনে আরও তিনজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে।

গতকাল রামুর কচ্ছপিয়া, রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, গর্জনিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ধানের শীষের তুলনায় নৌকার প্রচারণা কিছুটা বেশি। আবার কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, পিএমখালী, গোমাতলী ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রচারণা বেশি। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে গ্রামে গ্রামে নৌকার পক্ষে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। আর বিএনপির নেতারা কয়েকজন মিলে মিলে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া গাড়িতে মাইক বেঁধে প্রচার হচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী গান। গানে প্রার্থীর গুণগানের মধ্যে এলাকার উন্নয়নের কথাও তুলে ধরা হচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় মাইকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কমলের রেকর্ড করা ভাষণও প্রচার হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলেন, গত সাত দিন তাঁরা ধানের শীষের পক্ষে কোনো প্রচারণায় নামতে পারেননি। মাঠে নামলেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছেন। ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তাই শেষ মুহূর্তে দলীয় নেতা–কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে লুৎফর রহমান কাজল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচারণায় বাধা দেওয়া হলেও আমরা ভীত নই। কারণ এ আসন বিএনপির দুর্গ। ধানের শীষের জোয়ার দেখে নৌকার প্রার্থী কারচুপির মাধ্যমে জয়লাভের স্বপ্ন দেখছেন। ভোটকেন্দ্র পাহারা বসিয়ে সেই দুঃস্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে দেবে না এলাকার মানুষ।’

আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারের আগের পরিস্থিতি নেই। মানুষ এখন অনেক সচেতন। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় লোকজন নৌকায় ভোট দেবেন। তাই সর্বত্র নৌকার গণজোয়ার। কিন্তু বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় দেখে নৌকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।