হোসনা, সাহিদা, রিমা মিথিলা, রেখাসহ পোশাকশ্রমিক আরও অনেকের চাকরি গেছে। মরকুন পশ্চিমপাড়া বস্তি। ৩ অক্টোবর।
হোসনা, সাহিদা, রিমা মিথিলা, রেখাসহ পোশাকশ্রমিক আরও অনেকের চাকরি গেছে। মরকুন পশ্চিমপাড়া বস্তি। ৩ অক্টোবর।

সরেজমিনে টঙ্গী

পোশাকশ্রমিকদের বসতিতে কাজের আকাল

বেলা ১১টাতেও অনেক দোকানের ঝাঁপ খোলেনি। রাস্তা দিয়ে কয়েকটা ফাঁকা বাস চলে গেল। অটো যাচ্ছে-আসছে। বেশির ভাগই ফাঁকা।
গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে মরকুন টিঅ্যান্ডটি বাজার এলাকায় কালীগঞ্জ সড়কের পাশে মমিনুর রহমানের জন্য অপেক্ষা করছি। তাঁর সঙ্গে কাজ হারা পোশাকশ্রমিকদের একটি বস্তিতে যাব। দিনটা ৩ অক্টোবর।

এলাকার মূল বাসিন্দা শ্রমজীবী মানুষদের অনেকে কোভিডকালে কাজের আকালে দেশে ফিরেছেন। অনেকের রোজগার তলানিতে।

ইত্যাদি জেনারেল স্টোর অ্যান্ড লাইব্রেরিতে কিছুটা ভিড়, তবে সেটা অলস আড্ডার। দোকানের অনেকগুলো তাক খালি। মালিক মো. ফারুক হোসেন বললেন, বেচাকেনা নেই, পুঁজির অবস্থাও খারাপ।

বিসিক শিল্পনগরী ঘেঁষা এসব অঞ্চলের প্রাণ শ্রমজীবী মানুষজন, মূলত পোশাকশ্রমিকেরা। কোভিডকালে কাজের আকালে অনেকে গ্রামে ফিরে গেছে। অনেকে কাজ খুঁজছেন, রোজগার তলানিতে।

ভোগ্যপণ্যের ডিলার মো. সাইফুল ইসলাম বিভিন্ন দোকানে মাল সরবরাহ করেন। বললেন, গত ছয় মাসে চার-পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতি গুনেছেন। দোকানপাট খোলার পরও চাহিদা জাগেনি। কমিশনের টাকায় তাঁর তিনটি ভ্যানগাড়ির চালকের বেতন আর গুদামভাড়া উঠছে না।

বেচাকেনা নেই, দোকানের তাক খালি। ভোগ্যপণ্যের ডিলার সাইফুল ইসলামের ব্যবসা ছোট হচ্ছে। মরকুন, টিএন্ডটি বাজার, টঙ্গী। ৩ অক্টোবর।

হাল ছাড়া গলায় সাইফুল বলেন, ‘এই মাসে একজন ড্রাইভার বাদ দিয়া দিলাম। একটা গাড়িতে মিনিমাম ৩০ হাজার টাকা সেল হইলে ড্রাইভারের বেতন উঠে। হয় ১৫ হাজার, ১৮ হাজার।’
শ্রমিকনেতা ও স্বেচ্ছাসেবক মমিনুর এলে আমি আড্ডা ছাড়ি। মলিন জনপদ পেরিয়ে পৌঁছাই রেলস্টেশনের কাছে মরকুন পশ্চিমপাড়া বস্তিতে।

বস্তির মুখে টং দোকান। পান-সিগারেট, বিস্কুট, পলিথিনের ব্যাগে ঝোলানো কেক-পাঁউরুটি। বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে দোকানটি চালান হাসনা আরা বেগম। বললেন, পাঁচ টাকা দামের চা-ই বেশি চলে। ‘মাইনষের হাতে ট্যাহা-পয়সা নাই।’

অভাবের গোলকধাঁধায়

পিঠাপিঠি আধা পাকা আর টিনের ঘরের মধ্য দিয়ে একটা সরু গলি। পথে বসে খেলছে ছয়টি শিশু। চকচকে চোখ ছোট্ট রাহিম কালো মাটির ডেলা পিষে চালের গুঁড়ো করছে। অন্যরা বোতলের মুখের ছাঁচে তা ভরে পিঠা বানাচ্ছে।

মরকুন পশ্চিপাড়া বস্তির গলিতে বসে মাটি দিয়ে পিঠা বানানোর খেলায় ব্যস্ত শিশুরা। ৩ অক্টোবর।

বাঁয়ে তিনটি বাঁক ঘুরে হাঁড়ি-বাসন ভরা প্লাস্টিকের ঝুড়ি, মগ-বালতি ছড়ানো এক টুকরো উঠান, কলতলা। একপাশে সরকারি কলের পানি ধরে রাখা ড্রাম-বালতির ফাঁকে লুকিয়ে একটি শিশু মাথায় পানি ঢেলে চলেছে।

উঠানের পাড়ে একটি টিনের ঘরে থাকেন সুমি। তাঁর জানালার নিচে ভাঙা বালতিতে লাউয়ের চারা। তিনি একটা শার্টের কারখানায় অপারেটর ছিলেন। কোরবানির ঈদের এক-দেড় মাস আগে ছাঁটাই হয়েছেন।

শার্টের অপারেটর সুমির চাকরি গেছে গত জুনে। স্বামীর একার রোজগারে ছেলের দুধ জোটানো কঠিন। মরকুন পশ্চিমপাড়া বস্তি। ৩ অক্টোবর।

‘করোনাতে তখন গার্মেন্টসে কাজ নাই,’ বলেন সুমি। মালিকের যুক্তিটা অসহায় গলায় তিনিই দিয়ে দেন--‘এত লোকেরে বসায়া তো বেতন দেওয়া সম্ভব না। চার শর ওপরে হইব লোক ছাঁটাই করসে।’

ওভারটাইম মিলিয়ে মাসে নয়-সাড়ে নয় হাজার টাকা ঘরে আনতেন সুমি। এখন অটোচালক স্বামীর দৈনিক আনা তিন-চার শ টাকাই ভরসা। তাঁরও আয় কমেছে। করোনায় একসঙ্গে দুজন লোক গাড়িতে উঠতে চায় না।
কোলের ছেলেটি দেড় বছরের। সাড়ে সাত বছর বয়সী মেয়ে বারো শ টাকা বেতনের মাদ্রাসায় পড়ে। সেটা খুলেছে। আজ সুমি মেয়েকে পাঠিয়েছেন। সেখানেই দুপুরে খাবে, সন্ধ্যায় নিয়ে আসবেন।
সুমির চাকরিকালে তাঁর মা ঘর সামলাতেন, এখন গ্রামে ফিরে গেছেন। ঘরে একটা চৌকি, এক কোনায় কয়েকটা হাঁড়িপাতিল, কৌটা-বাটা। দড়িতে কাপড়চোপড় ঝুলছে। খুপরি ঘরগুলোতে ফ্যান ছাড়া থাকা যায় না। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ঘরটার ভাড়া তিন হাজার টাকা ছাড়ায়।
চার মাসের ভাড়া বাকি পড়েছে। চাকরি পাওয়ার আশাও ক্ষীণ--‘এখন কই যামু? সব জায়গায় একই অবস্থা। কাজ নাই। দেখা যায় চালু ফ্যাক্টরি। এক সপ্তা, দুই সপ্তা পরপর বন্ধ কইরা দিতাছে।’

দরজায় কলরব

ঘরে চৌকিতে বসে আমরা কথা বলছি। দরজায় ভিড় করা নারীদের দেখিয়ে সুমি বলেন, কারও চাকরি নাই। ‘এরম অনেক লোক আছে এলাকা জুইড়া। আমাগো এলাকাটা ঘুরলে দেখতে পারবেন, বেশির ভাগই অভাব।’

‘২৬ মার্চ যে বন্ধ দিছে, আর ফ্যাক্টরি খোলেই নাই।’
সুমি, কাজ হারানো পোশাকশ্রমিক

এদিকের অনেক কারখানা ‘টোটালি বন্ধ, গেটে তালা ঝোলে।’ দরজায় গুনে গুনে ১১ জন। কথার ওপরে কথা হুমড়ি খায়।

‘যদি চাকরি থাকত, কেউ কি এখন বাসায় থাকত?’ ‘২৬ মার্চ যে বন্ধ দিছে, আর ফ্যাক্টরি খোলেই নাই।’ ‘চাকরির জন্য গেলেও পাই না। আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নাই।’
রেখার চাকরি গেছে গত এপ্রিলে। তিনি মহিলা মাদ্রাসায় রান্নার কাজ নিয়েছেন। চার হাজার টাকা বেতন, আর একবেলা খাওয়া পান। আরও দুই বাসায় কাজ করছেন।

একেকজনের কয়েক মাসের ঘরভাড়া বাকি পড়েছে। বাড়ির মালিকেরা চাপ দেন। কিছু করার নেই, এটাও বোঝেন। সবাই বললেন, করোনাবন্ধের সময় বাড়িওয়ালি চালডাল-আলু সাহায্য দিয়েছিলেন। দু-একজন সরকারি সাহায্যের ১০ কেজি চালও পেয়েছিলেন।

ছেলের দুধ, মেয়ের মাছ

হোসনা পানের দোকানের জন্য সুপারি কেটে মেয়ের খাওয়া জোগান।

মেয়ে কোলে হোসনা আক্তার বলেন, ‘নিজে না খাইলেও বাচ্চার খাওন জোগাড় কইরা দিতে হয়।’ তাঁর স্বামীও ছাঁটাই হয়েছেন, মাঝেমধ্যে রিকশা চালান। হোসনা স্টেশন রোডের এক পানের দোকানের জন্য সুপারি কাটেন।

মস্ত ছরতা পায়ে চেপে ধরে দৈনিক এক কেজি শুকনা সুপারি অথবা ২০০টি কাঁচা সুপারি কাটতে হয়। মাস গেলে পনেরো শ টাকা পান। পানের বিক্রি ভালো থাকলে দুই হাজার টাকাও হাতে আসে। এই টাকায় হোসনা মেয়েকে খাওয়ান।

সুমির ছেলের ল্যাক্টোজেনের কৌটা প্রায় খালি। চুপড়িতে এক কেজি আলু, আধা কেজি পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ। দুই কেজি চালে দুই-তিন দিন চালান। সকালে স্বামী ভাত-আলুভর্তা খেয়ে বেরিয়েছেন। গত দিনের তিন টুকরা নলা মাছ তোলা আছে। মেয়ে রাতে মাছ খুঁজবে।

এক মুঠ ডাল, একটা রসুন

হোসনার শাশুড়ি মধ্যবয়সী হেলেনা আক্তার এক বছর একটি কারখানায় হেলপারি করেছেন--‘মহামারির সময় বন্ধ হইল।’ তিনি এখন বাড়িওয়ালিদের চারটি বাসায় কাপড় ধোন, ঘর মোছেন। কেউ পাঁচ শ, কেউ এক হাজার টাকা দেন।

হেলেনা ও হোসনা, শাশুড়ি আর পুত্রবধূ। মরকুন পশ্চিমপাড়া বস্তি। ৩ অক্টোবর।

মনিব কখনো বাসি ভাত-তরকারি, এক মুঠ ডাল, একটা টমেটো, একটা রসুন দেন। এজমালি রান্নাঘরের চুলায় সেদিন মনিবের দেওয়া ডাল ফুটছিল। তাঁরা সবাই সরকারি গাড়ি থেকে ৩০ টাকা কেজির মোটা চাল কেনেন।

হাঁড়িতে চাল দেখিয়ে হোসনা বলেন, কখনো চালে পোকা থাকে--‘এ-ই কষ্ট কইরা হাঁইট্যা যায়া আনমু। কোনটা খায়া আমরা বাঁচমু? সবকিছুরই কেজিতে কেজিতে দাম বাড়াইসে। আমাগো তো খাওন লাগে!’

ইব্রাহিমের দুটি চোখ

আবর্জনা জমা গলির গোলকধাঁধা ঘুরে ৫০ ঘরের একটি বাড়িতে যাই। কয়েকটা ঘর টিনের, বাকিগুলো দেড় কামরার টিনচালা পাকাঘর। সেগুলোতে দুটি পরিবারও থাকে।
পাকা ‍উঠানে মুরগির বাচ্চা দৌড়াচ্ছে। কলপাড়ে ভিড় জমছে। একটা আধা কামরায় আলপনা আর তাঁর স্বামী আমির হামজার এক-চৌকির সংসার। দুজনই পোশাক কারখানায় অপারেটর ছিলেন। বিয়েও সেই সূত্রে।

করোনাবন্ধের এক মাস আগে তাঁদের প্রথম সন্তান ইব্রাহিম জন্ম নেয়। আলপনা বেতনসহ এক মাসের ছুটি পেয়েছিলেন। তারপর ‘করোনার ভেতর চাকরি গ্যাছে গা।’
ইব্রাহিমের মাথাটা অনেক বড়। কাজল টানা ভুরুর নিচে কষ্ট কাতর দুটি চোখ। মাথায় পানি জমেছিল। চার মাস আগে অপারেশন করাতে ৪৫ হাজার টাকা লেগেছে। মোট খরচ পড়েছে লাখের কাছাকাছি।

ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে আলপনা বলেন, ‘অনেক মানুষের থেকে টাকাটুকা নিয়া, ঘরের জিনিসপত্র সব বিক্রি কইরা বাবুর চিকিৎসা করাইসি।’ তাঁর গলা কেঁপে যায়।
হামজা বললেন, সরকারি হাসপাতালে তিন মাস ঘুরেও বাবুকে ভর্তি করাতে পারেননি। বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করিয়েছেন। এই দৌড়াদৌড়িতে তাঁর চাকরিটা গেছে। এখন কুলি বা জোগালির কাজ করেন। আলগোছে বললেন, একটি নির্মাণ কোম্পানিতে কাজ পেয়েছেন।

ছেলে ইব্রাহিমের অপারেশন করাতে প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে আলপনা ও হামজার। কারোই চাকরি নেই। মরকুন পশ্চিমপাড়া বস্তি। ৩ অক্টোবর।
সরকারি হাসপাতালে তিন মাস ঘুরেও বাবুকে ভর্তি করাতে পারেননি। বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করিয়েছেন।

আলপনা সকালে এক পোয়া চাল, আলুভর্তা আর ডাল রেঁধেছেন। ইব্রাহিমকে প্রতি মাসে ডাক্তার দেখাতে হয়। ঘরটির মূল কামরায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের চাকরি আছে। তাঁরা আপাতত বিনা পয়সায় থাকতে দিয়েছেন।

ফিরতি পথে দেখি, একটা ঘরের দরজায় পা ছড়িয়ে বসে আছে সেই মাটির পিঠাওয়ালি দলের একটি বাচ্চা মেয়ে। ১০ টাকা দামের এক প্যাকেট চিপস সে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ভাগ করে খেল অনেকক্ষণ ধরে।

ভরদুপুরে চালায় ক্যারাম বোর্ড ঘিরে তরুণদের জটলা। বস্তিতে অনেক শিশু। এক বৃদ্ধা ছুটে এসে বয়স্কভাতা কার্ড পাওয়ার আরজি জানালেন।

সকালের সুর

পশ্চিমপাড়া বস্তির সামনের টং দোকানটিতে ইদানীং শুধু চা আর পানই কিছুটা ভালো চলে। ৪ অক্টোবর।

৫ অক্টোবর সকালে বস্তিটিতে ফিরে যাই। তখনো নয়টা বাজেনি। টং দোকান থেকে দুই কাপ চা কিনলেন এক মা। ছেলেকে এক প্যাকেট বিস্কুট আর একটা ছোট কেক দিলেন। মোট হলো ৩০ টাকা। ১০ টাকা কাল দেবেন।


উল্টোদিকে আরেকটি টঙের সামনে বড় তাওয়ায় পরোটা ভাজছেন রঞ্জু ইসলাম। পরোটা আর ডালভাজি পাঁচ টাকা করে। ডিম ১৫ টাকা--কাউকে খেতে দেখলাম না।
একমাত্র টেবিলটিতে চারজন পুরুষ নাশতা করছেন। তাঁরা আশপাশের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ছোটখাটো নেতা। লুঙ্গি পরা গামছা গলায় একজন এসে একটা গরম পরোটা কিনে কাগজে মুড়ে নিয়ে গেলেন।

হেলপার ও পুরুষ

ফারুক ও মিথিলা। স্বামী-স্ত্রী দুজনের কারওই চাকরি নেই। ৪ অক্টোবর।

সেদিন ফারুকের সঙ্গে দেখা হলো। তিনি এখন রিকশা চালান, ছিলেন পোশাক কারখানায় অপারেটর। গত মে মাসে রোজার ঈদের আগে বেতন দিয়ে কারখানাটি বন্ধ হয়েছিল।

ফারুক বললেন, ‘হেরা করোনার ভেতর ছুতা দিয়া অনেক লোক বাইর কইরা দিসে।’ কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। কারখানা খুললে চাকরির খোঁজে গিয়েছিলেন। কর্মকর্তারা বলেছেন কাজ কমে গেছে, আর লোক লাগবে না।

ফারুকের বেতন ছিল সাড়ে নয় হাজার টাকা, ওভারটাইম মিলিয়ে ১২-১৩ হাজার আসত। স্ত্রী মিথিলা বড়বাড়ি এলাকায় একটি প্যান্টের কারখানায় হেলপার ছিলেন। তিনি পেতেন সাড়ে সাত হাজার টাকা। তাঁরও চাকরি গেছে।

দুজনে মিলে মাসে ২০ হাজারের মতো আয় করতেন। এখন শুধু ফারুক দিনে দুই-আড়াই শ টাকা ঘরে আনেন। তাঁদের একটি ছোট্ট ছেলে আছে। আছেন ফারুকের বাবা-মা। দেড় কামরার ঘরটির ভাড়া বিদ্যুতের বিলসহ মাসে প্রায় ৪ হাজার টাকা।

পাঁচ মাসের ভাড়া বাকি পড়েছে। ফারুক বলেন, ‘বাড়িওয়ালারে কইতাসি, ভালো একটা গার্মেন্টস চালু হইলে লোক নিলে ডিউটি কইরা দিয়া দিব। ভাইঙ্গা ট্যাকা দিতাসি। দিয়া দিয়া কিসু কাটাইতাসি।’

মিথিলার কারখানায় এই বস্তির এক গাড়ি মানুষ কাজ করতেন। তিনি বলেন, ‘বেতন না দিয়া বাইর কইরা দিসে। পাঁচ দিনের বন্ধ দিয়া একেবারেই বন্ধ।’ পরে খুললে তাঁরা যোগাযোগ করেছেন। লাভ হয়নি।

‘ছেলেদের এখন গার্মেন্টসে নেওয়া টোটাল বন্ধ। করোনার ভিতর ছেলেরা বেতনের লাইগা আন্দোলন করসি।’

মিথিলা বলেন, ‘গার্মেন্টসের সামনে গেলে ঝাড়ি মারে, আইছ কি লাইগ্যা? কইছি কাজ নাই!’এখন যাঁরা কাজ করেন, বেতন ঠিকমতো পান না। ওভারটাইম নাই। তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায়।

হেলপারদের চাকরি যাচ্ছে বেশি, এ কথা সবাই বলেছেন। ফারুকও বললেন, কারখানায় এখন পাঁচ-ছয় মেশিনে একজন হেলপার সুতা কাটে, কাপড় ভাঁজ করে।

টোকানো শাক দিয়ে ডাল, আলুর ভর্তা, সরকারি গাড়ির এক কেজি চাল--এই খাবেন মিথিলারা পাঁচজন, তিন বেলায়। ৪ অক্টোবর।

ফারুক আরও বললেন, ‘ছেলেদের এখন গার্মেন্টসে নেওয়া টোটাল বন্ধ। করোনার ভেতর ছেলেরা বেতনের লাইগা আন্দোলন করসি। মহিলারা তো বেতন না দিলে কিছু বলতে পারে না। চুপচাপ বইয়া থাকে।’

‘আম্মু, মজা দেও!’

মিথিলার ছেলে আবদুল্লাহ্‌ সারাদিন কাঁদে, ‘আম্মু, মজা দেও।’ ৪ অক্টোবর।

ফারুকের বাবা হৃদরোগী, একসময় যক্ষ্মাও হয়েছিল। ওষুধপত্রের খরচটা বড়। মিথিলা বলেন, রোজ বাজার হয় না। আগের রাতে আলুভর্তা আর টোকানো শাক দিয়ে ডাল রান্না করেছেন। আজও তা-ই খাবেন।

এক কেজি চাল পাঁচজন তিন বেলা খান। ছেলে আবদুল্লাহর বয়স দুই বছর। ভাত খেতে চায় না। কিন্তু দুধ জোগাতে পারেন না। সুজি না, নুডলসও না।

মা বলেন, ‘আগে আয় করসি, পারসি। এখন শাক দিয়া পারলে দুইটা ভাত, আলু দিয়া পারলে দুইটা ভাত। সারা দিন কান্দে--মজা দেও, আম্মু, মজা দেও। টাকা দেও।’

সকালে ছেলেকে মগে করে রং চা দিয়েছিলেন--‘ওইটা নিয়া পুরা বাড়ি ঘুরতাসে। খাইত না এইটি। এইটি খাইত না।’

অসুস্থ হওয়ার আগে শ্বশুরের ভাতের হোটেল ছিল। দেয়ালের তাকে বড় বড় হাঁড়িপাতিল, আলমারির ওপর কাপড়ে ঢাকা টিভি, একটা খালি অ্যাকোরিয়াম, দরজার পাশে গোলাপি-সাদা পুঁতির ঝালর দেখি। অতীতের শখের চিহ্ন।
মাপা হাতে ভাত-তরকারি বাড়েন মিথিলা। ফারুক রিকশা নিয়ে বেরোবেন। রোজই তিনি চাকরির খোঁজও করেন। শুনেছেন জানুয়ারি মাসে লোক নিতে পারে।

কাজের সংকট, আয়ের সংকটে

৫ অক্টোবর সকালে রান্নাঘরের দুয়ারে বসে বিরস মুখে ছোট বাটিতে ডাল-ভাত খাচ্ছিলেন শাহনাজ। গতকাল কারখানায় জেনেছেন, আপাতত ১৫ দিন কাজ বন্ধ। মজুরি পাবেন না। এমনটা প্রায়ই হচ্ছে।

শাহনাজের কারখানা ১৪ দিনের জন্য বিনা বেতনে বন্ধ হয়েছে। এমন মাঝেমধ্যেই হয়। ৪ অক্টোবর।

আমার পথপ্রদর্শক মমিনুর গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতা। চাকরি করেন এনজিও কর্মজীবী নারীতে। তাঁর নেতৃত্বে একটি নারী স্বেচ্ছাসেবক দল করোনাবন্ধের গোড়া থেকে টঙ্গীতে অভাবী মানুষদের ত্রাণ দিচ্ছে, সহায়তা করছে।

গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের কাজ দেখে গিয়েছিলাম। দলটি বড় হয়েছে। কাজও বেড়েছে। তাঁরা করোনায় কাজ হারানো অভাবী মানুষদের সঙ্গে বিভিন্ন সেবাদাতা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সংযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছেন।

টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী কেন্দ্রিক শ্রমিকেরা পাগাড়, মিরাশপাড়া, গোপালপুর, মরকুন, শিলমন, বৌবাজার, জামাইবাজার--এসব এলাকায় পাকা বা আধা পাকা বাসায় ছোট ছোট ঘর নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বস্তি আছে কয়েকটি।

মমিনুর বলছেন, পুরো এলাকাজুড়ে কমবেশি কাজের সংকট আছে। তবে বস্তিগুলোতে সবচেয়ে বেশি। করোনার প্রথম ধাক্কাতেই শিল্পনগরী আর বাইরের অনেক সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ক্রমে মাঝারি কয়েকটিও বন্ধ হয়েছে। ধোলাই কারখানা অনেক বন্ধ হয়েছে। ছাঁটাই চলেছে অধিকাংশ কারখানায়।

দুর্বলতর কারখানাগুলোতে কাজ করা দরিদ্রতর শ্রমিকেরাই বস্তিতে থাকেন। বাসাবাড়িতে থাকা শ্রমিকদের অবস্থা কিছুটা ভালো। কাজ হারিয়ে তাঁদের অনেকে গ্রামে ফিরে গেছেন। সেসব বাসায় ঘর খালি পড়ে আছে।

গ্রামে যাঁদের ঘরবাড়ি আছে, যেসব পরিবারের তিন-চারজন সদস্য পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন, তাঁদের কিছু সঞ্চয় ছিল। গ্রামে গিয়ে কিছু একটা করতে পারছেন। কিন্তু অধিকাংশ বস্তিবাসীর এসব সহায়-সুযোগ নাই। তাঁরা এখানেই রয়ে গেছেন।

দুর্বলতর কারখানাগুলোতে কাজ করা দরিদ্রতর শ্রমিকেরাই বস্তিতে থাকেন। ছাঁটাইয়ের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা কঠিন। সব ছাঁটাই নোটিশ দিয়ে হয়নি।

ছাঁটাইয়ের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা কঠিন। সব ছাঁটাই নোটিশ দিয়ে হয়নি। চোরাস্রোতের মতো দুজন-পাঁচজন করেও ছাঁটাই চলেছে। মমিনুরের হিসাবে, পশ্চিমপাড়ার শুধু দুটি বাড়িতেই অন্তত ৫০ জন চাকরিচ্যুত শ্রমিক আছেন। বস্তির বাইরে এত বেশি নেই।

পশ্চিমপাড়া পড়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে। কাউন্সিলর মো. সাদেক আলীকে বাজারের একটা কাপড়ের দোকানে পেলাম। তিনি বললেন, এলাকায় পোশাকশ্রমিকের পরেই বেশি ছিল রিকশা, ঠেলা বা ভ্যানচালক ও নির্মাণশ্রমিক। করোনাকালে সবারই ক্ষতি হয়েছে।

তবে পোশাকশ্রমিকদের জীবনমানের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এখন কারখানা সচল হচ্ছে। কিন্তু গ্রামে চলে যাওয়া শ্রমিকেরা সবাই ফেরেননি। সাদেক আরও বলেন, ‘যারা আছে, তারাও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। মালিকেরা সময়মতো টাকা দিচ্ছে না। বেতন ঠিকমতো পাচ্ছে না।’

যারা আছে, তারাও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। মালিকেরা সময়মতো টাকা দিচ্ছে না। বেতন ঠিকমতো পাচ্ছে না।’
মো. সাদেক আলী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর

দুর্বল কারখানা, বিপন্ন মানুষ

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী দপ্তর বলছে, এখানে বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী তৈরিপোশাক, নিটপোশাক বা এগুলোর সরঞ্জামাদির কারখানা। ১৩৬টি সচল কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ৬০ হাজার। করোনাকালে এবং আগে থেকে রুগ্ন হয়ে আছে ২৫টি কারখানা।

শিল্পনগরীতে ন্যাশনাল ফ্যান কারখানায় টানা লে-অফ চলেছে। দেয়ালে ছাঁটাইয়ের তালিকা দেখি। কিছু পোশাক কারখানা শুনশান। ছাঁটাই-লে-অফের প্রতিবাদে আর দুই ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে টুকটাক বিক্ষোভের খবর শুনেছি।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হিসাবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত গাজীপুরে ৫৪টি কারখানা বন্ধ বা লেঅফ করা ছিল। ছাঁটাই হয়েছিল ৫১ কারখানায়। আরও ৫৮টি কারখানা বেতনভাতা দেয়নি। ভুক্তভোগী শ্রমিকের মোট সংখ্যা ৬৫ হাজারের কাছাকাছি। জেলায় পোশাকখাতের কারখানাই বেশি।

গাজীপুরে ১১২টি কারখানায় বন্ধ, লেঅফ, ছাঁটাই বা বেতনভাতা না দেওয়ার সমস্যা ছিল। ভুক্তভোগী শ্রমিকের মোট সংখ্যা ৬৫ হাজারের কাছাকাছি।

এদিকে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক ২ অক্টোবর বলেছেন, সারা দেশে ১০৬টি সদস্য কারখানায় ৭০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির সাধারণ সদস্য সাড়ে চার হাজারের বেশি। সরাসরি রপ্তানি করছে ১ হাজার ৯৬৬টি কারখানা। নিট শিল্পমালিক সমিতি বিকেএমইএর ওয়েবসাইট ২ হাজারের বেশি সদস্য দেখাচ্ছে। সরাসরি রপ্তানি করে ৮৪০টি।
এভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার সংখ্যার আঁচ পাওয়া যায়। সংগঠনের বাইরেও এমন কারখানা আছে। কোভিডকালে অনেক কারখানা নতুন করে সাব-কনট্রাক্টে চলে গেছে। প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী এক মালিক বলছেন, পোশাক ও নিট খাত মিলিয়ে দেশে এমন দুর্বল কারখানার কয়েক লাখ শ্রমিক বিপদে আছেন।

করোনার পর থেকে সাধারণভাবে ক্রয়াদেশ কমেছে। বিদেশি ক্রেতারা দাম কমিয়েছেন। পয়সা দেরিতে দিচ্ছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাজহারুল ইসলামের নিজের একটা পোশাক কারখানা আছে। মুঠোফোনে আলাপে শ্রমিকদের বিপন্নতার কথা তিনি মানলেন। তবে বললেন, করোনার পর থেকে সাধারণভাবে ক্রয়াদেশ কমেছে। বিদেশি ক্রেতারা দাম কমিয়েছেন। পয়সা দেরিতে দিচ্ছেন।
মাজহারুল বললেন, মান মান্য করা কমপ্লায়েন্ট কারখানাগুলো আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ছাঁটাই-লেঅফ করেছে। আর বললেন, খরচ ও ঝামেলা কমাতে হেলপার কমানো হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের এড়ানো হচ্ছে।

‘একটা শ্রমিক সারা জীবন যখন পরিশ্রম করল, যে মজুরিটা পেয়েছে, সে কোনোরকম নিজের জীবনটা যাপন করেছে।’
মমিনুর রহমান, , শ্রমিকনেতা ও স্বেচ্ছাসেবক

কাউন্সিলরের নিজের কারখানায় অবশ্য কাজ ছিল, তিনি কাজের লাইনও বাড়িয়েছেন। তবে বললেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দা চলবে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ক্রেতাদের বিমুখ করলে অনেক কারখানা ঝুঁকিতে পড়বে।
মমিনুরও কারখানা বন্ধ হওয়ার ভয়টা করছেন। তবে মালিকের সঙ্গে শ্রমিকের অবস্থার কোনো তুলনা চলে না--‘তাদের বাড়ি, গাড়ি, কী নাই? একটা শ্রমিক সারা জীবন যখন পরিশ্রম করল, যে মজুরিটা পেয়েছে, সে কোনোরকম নিজের জীবনটা যাপন করেছে।’
মমিনুরের আরেক ভয়, মালিকেরা খরচ কমানোর জন্য কৌশলগত ছাঁটাই বাড়াবেন। চাকরি স্থায়ী করা এবং সুবিধাদি দেওয়া এড়াতে বছর হিসাব করে শ্রমিক বাদ দেবেন। অথচ আপাতত ক্রয়াদেশ বাড়ছে বলে শুনছেন।
কাউন্সিলর মাজহারুলের আরজি, শ্রমিককে তিন মাস বেতন দিতে সরকার যে কোভিড-প্রণোদনা দিয়েছে, তা পরিশোধের সময় পাঁচ বছর করা হোক। সহজ ঋণ আরও দেওয়া হোক।

সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাগুলো সরকারের কোভিডকালীন প্রণোদনার আওতার বাইরে ছিল। যাদের আসলেই টাকা দরকার ছিল, তারা পায়নি।

সাব-কনট্রাক্ট কারখানাগুলো প্রণোদনার আওতার বাইরে ছিল। শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তারের মতে, সরকার এবং বিজিএমইএ-বিকেএমইএর সিদ্ধান্তের দোষে যাদের আসলেই টাকা দরকার ছিল, তারা পায়নি। ছোটরা পায়নি।

মুঠোফোনে কল্পনা আমাকে বলেন, এই কারখানাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর শ্রমিকেরা কোভিডকালে ভুগেছেন। তাঁরা তিন মাস বেতনই পাননি, ‘এর পরে হদিসহীন হয়ে গেছেন।’

কাজের জন্য হাহাকার

তৈরিপোশাকসহ রপ্তানিমুখী তিনটি খাতের ১০ লাখ কাজহারা শ্রমিককে তিন মাসে নয় হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য দাতাদের তহবিল এসেছে। মালিক সমিতিগুলো তালিকা করে দেবে, সেই অপেক্ষায় টাকাটা বসে আছে। তালিকায় পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দাদের মতো শ্রমিকদের নাম উঠবে কি?

সুমির দরজায় জড়ো হওয়া মেয়েদের টুকরো টুকরো কথা কানে লেগে আছে:

‘আমরা চাই ফ্যাক্টরিগুলো চালু হোক। আমরা আবার চাকরিডা করি।...কারো কাছে যেন হাত পাতা না লাগে।’ ‘কারও ১০ কেজি, কারও পাঁচ কেজি কইরা খাওয়ার আশা করি না। আমরা চাকরি কইরা ভাত খাব।’ ‘নেয় না ম্যাডাম। আমরা কত জায়গায় ঘুরি।’

সেদিন বিকেলে বিসিকে কারখানা ছুটির পর শাকসবজি, শস্তা মাছের ভাগা, ২০-৩০ টাকার শুঁটকি কিনে মেয়েদের বাসায় ফিরতে দেখি। যেমনই হোক, নিজের আয়ে বাঁচাটা স্বস্তির!

টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে পোশাক কারখানা ছুটি হচ্ছে। চাকরি থাকলে বাজার করে ঘরে ফেরার সুযোগটুকু থাকে। ৪ অক্টোবর।

কিন্তু বিদেশি ক্রেতা আর দেশি মালিকের স্বার্থের দড়িটানাটানিতে এই স্বস্তির ভাগ্য বড়ই নাজুক। কারখানা টিকিয়ে রাখতে সরকার অবশ্যই সহায়তা করুক। কিন্তু মালিকের আগে শ্রমিকের স্বার্থকে মাথায় রেখে বিধিবিধানগুলো করুক। অন্তত কোভিডের এই আজাবের কালে।

লেখক: qurratul.tahmina@prothomalo.com