হোলি আর্টিজান মামলা

পেপারবুক প্রস্তুত, অপেক্ষা শুনানির

বিচারিক আদালতে রায়ের পর এখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আপিল শুনানি হাইকোর্টে শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ভয়াবহ ওই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো দেশ।

সেদিন জঙ্গিরা গুলি করে ও কুপিয়ে দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিককে হত্যা করে। নজিরবিহীন ওই জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতে রায় হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ের পর দ্বিতীয় ধাপে এখন হাইকোর্টে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আপিল শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। বেঞ্চ নির্ধারণ হলেই শুনানি শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

হোলি আর্টিজানে ২ জুলাই সকালে অভিযান শেষ করার পর সেনাবাহিনীর অবস্থান

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে দ্রুত শুনানি শুরুর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলাটি অতিগুরুত্বপূর্ণ গণ্য করা হয়েছে। মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়াগুলো চলছে।
মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। তারা কুপিয়ে ও গুলি করে ২০ দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে; যাঁদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি। সেই রাতে জিম্মিদের মুক্ত করতে শুরুতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন।

গুলশান হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি অভিযানে নিহত হন। তাঁরা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার ছাত্র মীর সামেহ মোবাশ্বের, মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্র নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক অভিযান চালিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়, ভেঙে দিয়েছে জঙ্গিদের অনেক আস্তানা। এসব অভিযানে নিহত হয়েছেন হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ আট জঙ্গি।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ এই হামলার মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করেছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নিহত পুলিশ সদস্যদের স্বজন, হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে আহত পুলিশ, হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক ও কর্মী, জিম্মি হয়ে পড়া অতিথি এবং যেসব বাড়িতে আস্তানা গেড়ে নৃশংস এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেসব বাড়ির মালিকেরা।

নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। মিজানুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা বর্তমানে কারাগারে আছেন।

আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপিল শুনানি এবং তা নিষ্পত্তির পালা। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়েছে। ২০২০ সালের আগস্টে সরকারি ছাপাখানা থেকে তা সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছেছে। সাধারণত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও একাধিক আইনজীবী জানান, সাধারণত বছর ও মামলার ক্রম অনুসারে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়ে থাকে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতেও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়ে থাকে। ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টে কয়েকটি বেঞ্চ রয়েছে।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে আট শতাধিক ডেথ রেফারেন্স মামলা এখন বিচারাধীন। ২০১৬ সালে আসা ডেথ রেফারেন্সের শুনানি এখন শেষ পর্যায়ে।

আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলাটি অতিগুরুত্বপূর্ণ গণ্য করা হয়েছে। মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়াগুলো চলছে। সংশ্লিষ্ট শাখার কার্যক্রম ও আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।