রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পিকআপের ধাক্কায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, তারা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মিছিলে ছিল। তবে কে কোন পক্ষের সমর্থক ছিল, তা পুলিশ জানাতে পারেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের বাধা দেওয়ার কারণে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এটাই নির্বাচনী সহিংসতায় বড় ধরনের প্রাণহানির প্রথম ঘটনা। নিহত দুজন হলো আরিফ হোসেন (১৪) ও মো. সুজন (১৮)। এদের মধ্যে সুজন নির্মাণশ্রমিক এবং আরিফ প্রিন্টিংয়ের কাজ করত। এ ঘটনায় আরও কয়েক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁদের সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা–১৩ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ওই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘাতের ঘটনা ঘটে। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাদেক খানের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার জন্য তাঁর কর্মী–সমর্থকদের একটি গাড়িবহর মিছিল নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ের সামনে যায়। এ সময় নানকের সমর্থকেরা বাধা দেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের মোহাম্মদপুর বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আরিফ ও সুজন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মিছিলে অংশ নিয়েছিল।
আরিফ ও সুজনের বন্ধু নুরুল আমিন প্রথম আলোকে জানান, সুজন নবীনগর হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডে থাকে। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে সে। তার বাবার নাম রুহুল আমিন।
নুরুল আমিন আরও জানান, আজ সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা নুর আলম তাদের একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার দাওয়াত দেন। এ জন্য তারা ১০–১২ জন তরুণ–কিশোর বন্ধু মিলে নবোদয় হাউজিং লোহার গেট এলাকায় যায়। সেখানে মিছিল করে একটি পিকআপ ভ্যানে ওঠে তারা। এর পরপরই কারা যেন পিকআপ ভ্যানে ঢিল ছুড়তে থাকে। এ সময় পিকআপ থেকে সবাই তাড়াহুড়ো করে নামতে শুরু করে। চালক পিকআপভ্যানটিও পেছনের দিকে চালাতে থাকেন। এ সময় কয়েকজন পড়ে গেলে পিকআপটি সুজন ও আরেক কিশোরের ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আরিফ মারা যায়। গুরুতর অবস্থায় সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সুজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে নিহত আরিফের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আরিফ আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিল।’ ময়নাতদন্তের জন্য আরিফের লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর। তিনি বলেন, আরিফ প্রিন্টিংয়ের কাজ করে। তার বাবার নাম মো. ফারুক হোসেন। ভোলা জেলার লালমোহনে গ্রামের বাড়ি। ঢাকার তুরাগ হাউজিংয়ের ঢাকা উদ্যান পানির পাম্পের পাশে তার বাসা।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক সোনিয়া আকতার বলেন, হাসপাতালে আরিফকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ছেলেটিকে যাঁরা নিয়ে এসেছেন, তাঁরা বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় সে আহত হয়েছে। মারামারির ঘটনায় আহত ১৬ জনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনকে ক্যাজুয়ালটি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন।
নিহত সুজন ও আরিফ আওয়ামী লীগের কর্মী জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান দাবি করেন, মাদক ব্যবসায়ীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বাধার কারণে দুজন মারা গেছে। এখানে জাহাঙ্গীর কবির নানকের লোকজন জড়িত ছিলেন না। আর ঘটনার সময় তিনি (সাদেক খান) ধানমন্ডি ৩ নম্বরে ছিলেন।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।