পুলিশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা বেআইনি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা

শাহীন চাকলাদার
শাহীন চাকলাদার

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নেটওয়ার্ক মেম্বার শেখ সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজাতে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশনা দিয়েছিলেন এই এলাকার সাংসদ শাহীন চাকলাদার। এ জন্য প্রয়োজনে ওসিকে থানায় বোমা মেরে বা কোনো ইটভাটায় পুলিশ পাঠিয়ে বোমা মেরে ‘ডাকাতির উদ্দেশে বোমা হামলা’ মামলা দিতে বলেছিলেন তিনি। পুলিশকে অনৈতিক এ অবৈধ কাজ করতে একজন সাংসদের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার ঘটনা বাহিনীর উচ্চপর্যায় থেকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুরো ঘটনা এবং ফাঁস হওয়া সাংসদ (যশোর-৬) শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে ওসির কথোপকথনের অডিওর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে অডিও ফাঁসের পর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কেশবপুর থানায় করা সাইফুল্লাহর সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর অনুসন্ধান শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। পাশাপাশি সাইফুল্লাহর নিরাপত্তার জন্য সাদাপোশাকে কাজ করছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এই অডিওর বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। কোনো বেআইনি কিছু প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেখ সাইফুল্লাহ কেশবপুরের একটি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে বেলার সহযোগিতায় হাইকোর্টে একটি রিট করেন। আদালত ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে আদেশও দেন। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে এটি ভেঙে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। আর এতেই সাইফুল্লাহর ওপর ক্ষিপ্ত হন সাংসদ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয় সাংসদদের আনুকূল্যে এবং পুলিশ প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটা চালু রেখেছেন।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দীন গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জিডির বিষয়টি তদন্ত করছেন। সাইফুল্লাহর নিরাপত্তার জন্য যা করার, সেটি করছেন। এক প্রশ্নের জবাব পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ওই অডিওটির বিষয়টি উচ্চপর্যায় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তাঁরা কাজ করছেন না।

স্বরাষ্ট্রের তদন্ত দল যশোরে
সম্প্রতি যশোর শহরে পুলিশ সদস্যকে তুলে নিয়ে মারপিট ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসানকে পুলিশের নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি দল কাজ শুরু করেছে। তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই তদন্ত দল গতকাল যশোরে অবস্থান করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে।

গত ১৩ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদাপোশাকে শহরের পুরোনো কসবা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী সেখানে গিয়ে সাদাপোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হন। তখন নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইমরানকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসানকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। ওই রাতে পুলিশ স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। এর প্রতিবাদে পরদিন সকালে দলীয় নেতা–কর্মীরা যশোর-চুকনগর সড়ক অবরোধ করেন। পরে দুপুরের দিকে মাহমুদ হাসানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। গুরুতর আহত অবস্থায় মাহমুদ হাসানকে প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের বদলির আদেশ হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দল গতকাল ঘটনার আলামত হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। নির্যাতিত আওয়ামী লীগের নেতা মাহমুদ হাসান ছাড়াও যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান, চাকলাদার পাবলিকেশন প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের দুই কর্মচারী এবং প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তির বর্ণনা শুনেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দল গতকাল ঘটনার আলামত হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। নির্যাতিত আওয়ামী লীগের নেতা মাহমুদ হাসান ছাড়াও যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান, চাকলাদার পাবলিকেশন প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের দুই কর্মচারী এবং প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তির বর্ণনা শুনেছেন।

কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘তদন্ত দল আমাকে সার্কিট হাউসে ডেকেছিল। সেদিন গিয়ে ওই রাতে পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে অতর্কিত ভাঙচুর চালিয়েছিল। আমি ওগুলো জানিয়েছি। শহীদ মিনারে পুলিশ সদস্যকে মারপিটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মাহমুদ হাসান বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আরও দু-একজন নেতার সঙ্গে তদন্ত দল কথা বলেছে।’

তবে তদন্ত দল কোনো বক্তব্য দেয়নি। পুলিশের বক্তব্য জানতে চেয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।