১১ মাস আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র তাইফুর রহমানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তাইফুর আত্মহত্যা করেছেন বলে তদন্তের পরে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দেয়। তবে তাইফুরের পরিবার পুলিশের এই প্রতিবেদনকে ‘মনগড়া’ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের ভাষ্য, ‘প্রকৃত সত্য’ প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ তাইফুর আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিবারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছে।
তাইফুরের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার ব্রাহ্মন্দী গ্রামে। শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি কাজলশাহ এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাইফুরের লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ১৩ মার্চ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। তবে এটি ‘অসংগতিপূর্ণ ও মনগড়া’ দাবি করে গত ১১ সেপ্টেম্বর একই আদালতে নারাজি দেন তাইফুরের বাবা মো. তৌহিদুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ধারণা, তাইফুরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে। তাই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি দিয়ে পুনঃ তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন তিনি। তবে আদালত এখনো শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেননি।
তৌহিদুজ্জামান অভিযোগ করেন, তাইফুরের ঝুলন্ত লাশের ছবি ও সুরতহাল প্রতিবেদনের মধ্যে গরমিল রয়েছে। যে বাসা থেকে তাইফুরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে সিসি ক্যামেরা থাকলেও এর ফুটেজ তদন্তকারী কর্মকর্তা সংগ্রহ করেননি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, তাইফুরের পরিবারের অভিযোগ সত্য নয়, তাঁরা আবেগের বশবর্তী হয়ে অযথা দোষারোপ করছেন।
তৌহিদুজ্জামান নারাজি আবেদনে উল্লেখ করেন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৎকালীন প্রধান আবুল কালাম আজাদ নানাভাবে তাইফুরের সঙ্গে অশিক্ষকসুলভ আচরণ করেছেন। তাইফুর যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে না পারেন, সে জন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁকে স্নাতকোত্তরে কম নম্বর দেওয়া হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য তাইফুর যুক্তরাষ্ট্র যেতে চাইলেও বিভাগ তাঁকে সুপারিশ দিতে গড়িমসি করে। এ নিয়ে মারা যাওয়ার দিন সকালে তাইফুরের সঙ্গে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের বাদানুবাদ হয়। এর জের ধরেই তাইফুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন। তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মাধ্যমে পুনরায় তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল করলেও তিনি ধরেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ে কয়েক দিন গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার হবে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা প্রশাসনকে কোনোভাবেই জড়ানো উচিত নয়।’