রংপুরের পীরগাছায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এক বিএনপি নেতার করা মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। ওই বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে ওই সমাবেশ থেকে।
মঙ্গলবার পীরগাছা সরকারি কলেজে ওই সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং উপজেলা বিএনপির এক নেতার করা পাল্টাপাল্টি মামলা ও উভয় পক্ষের পৃথক কর্মসূচিতে পীরগাছার পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবারের সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীর করা মামলায় সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন, পীরগাছা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফারদিন এহসান ওরফে মাহিম, মুয়াম্মের আমিন, সাদ ইসলাম ও ইসমাঈল হোসেন।
পীরগাছা থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পীরগাছা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তিনি গত ৫ আগস্ট ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করেন।
পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা পীরগাছা সদরে বিক্ষোভ করেন এবং স্থানীয় থানা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মামলা প্রত্যাহারসহ বাদীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। পরদিন ৭ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা একরামুল হক বাদী হয়ে ওই বিএনপি নেতার নামে থানায় পাল্টা মামলা দায়ের করেন।
থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের পর থেকে উভয়পক্ষ পীরগাছা সদরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ হচ্ছে। এমনকি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সোমবার অর্ধদিবস দোকান বন্ধ রেখে মামলার প্রতিবাদ জানান।
পীরগাছা বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী শওকত হোসেন বলেন, পাল্টাপাল্টি মামলা হওয়ার পর গত কয়েক দিন ধরে উভয় পক্ষ পৃথকভাবে উপজেলা সদরে মিছিল-সমাবেশ করছেন। এতে এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কায় ভুগছেন বাজারের ব্যবসায়ীর সাধারণ মানুষ।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীর নামে দায়ের করা মামলার বাদী বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘ব্যবসায়ী সমিতি সকলের। এই সমিতির কার্যালয়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করার কারণে সবার সঙ্গে কথা বলে থানায় মামলা করেছিলাম। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে তা প্রত্যাহারের আবেদন করি। কিন্তু ছাত্ররা তা না মেনে উল্টো আমার নামে মামলা দিয়েছে।’
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুইটি মামলা গুরুত্বসহ তদন্ত করা হচ্ছে। এজাহার নামীয় প্রকৃত অপরাধী আসামিদের গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ সজাগ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম ছাত্রদের নামে থানায় মামলা দায়ের করার পরে তা প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন। পরে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ছাত্ররা থানায় মামলা দায়ের করায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।