পি কে হালদার বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দুদকের যোগাযোগ হয়নি

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান
ছবি: প্রথম আলো

ভারতে গ্রেপ্তার দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থ পাচারকারী প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ নেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান এ তথ্য জানান।

পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদক ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পেরেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘না, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুদকের সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি।’

দুদকের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পি কে হালদারকে আটক করা হয়েছে—এ তথ্য সঠিক কি না জানতে চাইলে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ‘এখন বিষয় হচ্ছে কী, আমরা যেটা বারবার বলি, সেটা হচ্ছে যে দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান—যারা প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে সম্পদের মামলা করে অভিযোগপত্র দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা রুজু করেছে। এর মধ্যে কিছু কিছু অল্প দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। ওয়ারেন্ট ইস্যু করা এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করাা—এসব দুদকেরই নেওয়া সিদ্ধান্ত। তো আমরা মনে করি, নিশ্চয়ই দুদকের এসব পদক্ষেপের একটা প্রতিফলন ভারতের এই গ্রেপ্তারের পেছনে রয়েছে।’
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ইডি সেখানকার গণমাধ্যমকে বলেছে, দুদকের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তারা নয়টি জায়গায় অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করেছে।

সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ইডি কেন সেটা বলেছে, সেটা ইডিকে জিজ্ঞেস করতে হবে।

সাঈদ মাহবুব খান জানান, পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় জরুরি সভা হয়। সেখানে আইন, পররাষ্ট্র, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট, ইন্টারপোল ও দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আসামি প্রত্যর্পণ এবং প্রত্যাবাসনের যে আইন রয়েছে, সেগুলোর ব্যবহার করে কীভাবে তাঁকে (পি কে হালদার) দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক বলেন, ‘ভারত থেকে পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যেসব প্রমাণ, ডকুমেন্ট প্রদর্শনের দরকার আছে সেগুলো সংগ্রহ এবং কমপাইলেশনের (সংকলনের) সিদ্ধান্ত হয় এবং সহসা আমরা এটা শেষ করব। এ ছাড়া কূটনৈতিক চ্যানেলসহ অন্যান্য চ্যানেল ব্যবহার করে তাঁকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেব। এটা দুদকের একার কাজ নয়। আশা করি, সবার সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে নিশ্চয়ই আমরা সফলকাম হব।’

নতুন করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটকে (বিএফআইইউ) দুদকের চিঠি কেন, জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, ‘পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আমাদের যে মামলাগুলো হয়েছে এবং তাঁর সম্পদের মামলার যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে ভারতে তাঁর অল্প পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে তথ্য ছিল। সেটা মামলায় ঢোকানো হয়েছে। এখন বাকি তথ্যগুলো যদি আমরা পাই, তাহলে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা নেব। সে বিষয়ে বিএফআইউতে আমরা চিঠি দিয়েছি। তারা সংগ্রহ করে আমাদের তথ্যগুলো দেবে।’
দুদকের এই কর্মকর্তা জানান, বিএফআইউ-এর তথ্যের ভিত্তিতে দুদক পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা করেছে। এখন যেহেতু দুদক পি কে হালদার ও সহযোগীদের বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে ভারতে সম্পদ গড়ার নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছে, সে কারণে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটকে নতুন করে সম্পদের তথ্য জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে আন্তমন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যাবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রতিনিধিদলে দুদক থাকবে কি না, জানতে চাইলে সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘প্রতিনিধিদলে যাওয়ার প্রয়োজন হলে দুদক তো থাকবেই। কারণ, দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা পি কে হালদারের বিষয়ে মামলা-মোকদ্দমা করেছে। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা নেই। সুতরাং দুদক যেহেতু মূল প্রতিষ্ঠান—সে তো থাকবেই।’