পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০১৭ সালের জুন মাসে ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর একাধিক মন্ত্রণালয় কয়েকটি কমিটি করেছিল। এর কারণ অনুসন্ধানে এসব কমিটি কাজ করে। পাহাড় ধস বন্ধে কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে অনেক সুপারিশও আসে। তবে দুই বছর পর দেখা যাচ্ছে, এসব সুপারিশ কাগজেই রয়ে গেছে।
পাহাড় ধস বন্ধে সুপারিশগুলো যে বাস্তবায়িত হয়নি, তা স্বীকারও করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নের দায় শুধু আমাদের নয়, এটা আন্তমন্ত্রণালয় উদ্যোগের বিষয়। সেই সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’ আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। তবে সুপারিশগুলো শুধু যদি কাগজেই সব থেকে যায়, তবে তা দুঃখজনক।’
২০১৭ সালের ১২ থেকে ১৩ জুন পার্বত্য তিন জেলাসহ ছয় জেলায় পাহাড় ধসে ১৬৮ জন নিহত হন। ১৩ জুন পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে নিহত হন ১২০ জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে পাহাড় ধসে এত প্রাণহানি আগে হয়নি।
ঘটনার তদন্তে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একাধিক কমিটি গঠন করে। মন্ত্রণালয়গুলোর দুটি উচ্চপদস্থ কমিটির দুই প্রতিবেদন এবং তিনটি বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাহাড় থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধে গত ৩১ মে ঢাকার শাহবাগে মানববন্ধন করেন স্থানীয় অধিবাসীরা। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলছিলেন, পাহাড় ধসে এত প্রাণহানির পরও প্রশাসনের টনক নড়েনি। পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের কাঠ সংগ্রহ বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। রাঙামাটি অ-উপজাতীয় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোলায়মান আলী বলেন, ‘পাহাড় ধসের পর তিন মাস কাঠ সংগ্রহ বন্ধ থাকলেও এখন চলছে।’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘গাছ কাটা বন্ধ তো নীতিনির্ধারণী বিষয়। সরকারি আদেশ পেলে আমরা এর বাস্তবায়ন করব।’
পাহাড় ধসের পর একাধিক কমিটির সুপারিশে বনাঞ্চলে বাঁশ ও পাহাড়ের উপযোগী বনায়নের তাগিদ দেওয়া হয়।
বন বিভাগের রাঙামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. ছানাউল্যা পাটোয়ারী বলেন, ব্যাপক হারে বনায়নে সবার সহযোগিতা পাইনি। পরিকল্পনা যা আছে, সেগুলোর বাস্তবায়নও সময়সাপেক্ষ বিষয়।
প্রতিটি প্রতিবেদনে পাহাড়ে ভূতাত্ত্বিক জরিপের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ দেওয়া হয়। তবে সরকারের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর জরিপের কোনো প্রস্তাব পায়নি। অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূতত্ত্ব) সালমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন প্রস্তাব অন্তত আমার জানা নেই।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে দেড় দশক ধরে আদা ও হলুদ চাষ চলছে ব্যাপক হারে। এই চাষে পাহাড়ের উপরিস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বলে সরকারি নানা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙামাটির উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, ‘দুই বছরে আদা ও হলুদ চাষ কমেছে, এ দাবি করা যাবে না। তবে আমরা বিকল্পের বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’