তদারকি না থাকায় মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝরনাগুলো পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত ৪ মাসে বেড়াতে এসে উপজেলার দুটি ঝরনা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে তিন পর্যটকের। আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন। স্থানীয়েরা বলছেন, কোনো সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় এবং অনভিজ্ঞ পর্যটকদের অতি উচ্ছ্বাসের কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।
মিরসরাই উপজেলায় ছোট-বড় ঝরনা আছে ১৪টি। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার কারণে গত ৪-৫ বছরে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে খৈয়াছড়া, বেয়ালিয়া, নাপিত্যাছড়া ও রূপসী ঝরনা। এখন প্রতিদিন এখানে ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো পর্যটক। ছুটির দিনগুলোতে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার উপজেলার নাপিত্যাছড়া ও খৈয়াছড়া ঝরনায় গিয়ে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। এদের বেশির ভাগই তরুণ-তরুণী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আড়াই-তিন কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি পথ ও ঝিরি পার হয়ে ঝরনা এলাকায় এসেছেন তাঁরা। ঝরনার পানিতে গা ভিজিয়ে আনন্দে হই-হুল্লোড় করে মাতিয়ে রেখেছেন পুরো এলাকা। এর মধ্যে দেখা গেল অতি উচ্ছ্বসিত কিছু পর্যটক ঝরনার খাঁড়া ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠে মুঠোফোনে সেলফি তুলছেন। আবার সাঁতার না জেনেও ঝরনার জলে গোসলে নেমেছেন কিছু পর্যটক। পর্যটকদের এমন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের কারণেই এখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে এসেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবু সাইদ। তিনি বলেন, মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো খুব সুন্দর। তবে এগুলো নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়েই দেখা উচিত।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও থানা-পুলিশের হিসাব মতে, গত চার মাসে এখানকার দুটি ঝরনা থেকে পড়ে নিহত হয়েছেন তিন পর্যটক। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১৭ জন। নিহত তিন পর্যটকের মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মো. আশরাফ হোসেন (৩০), বগুড়া সদরের মো. আবু আলী আল-হুসাইন সিদ্দিকীর (২৮) মৃত্যু হয়েছে খৈয়াছড়া ঝরনা থেকে পড়ে। রূপসী ঝরনায় পড়ে প্রাণ যায় নাটোর সদর উপজেলার মেহেদী হাসানের (২১)।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা তানভীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝরনাগুলো খুব বিপজ্জনক। বর্ষায় ঝিরি পথে স্রোত বৃদ্ধি পেয়ে এগুলো আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে। তার ওপর প্রশিক্ষিত কোনো গাইডের ব্যবস্থাও নেই এখানে। আর দুর্ঘটনাগুলো ঘটে উৎসাহী কিছু পর্যটকদের ঝরনা চূড়ায় উঠে বিপজ্জনক পিচ্ছিল জায়গায় দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা, ওপর থেকে ঝরনার খাদে লাফ দেওয়া ও সাঁতার না জেনে ঝরনার জলে নামার কারণে।
বন বিভাগের অধীনে থাকা অরক্ষিত এই ঝরনাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঝরনাগুলো দেখভাল করার মতো জনবল আমাদের নেই। তবে খৈয়াছড়া ঝরনাটি নিয়ে আমাদের একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে আছে। সেটি হলে আমরা এখানে তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলব।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কয়েক মাসে মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলোতে পর্যটকদের হতাহতের ঘটনাগুলো আমাদের নজরে এসেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটক যায় এমন প্রতিটি ঝরনার প্রবেশপথে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে এবং পাহাড়ের বিপজ্জনক ঢাল বেয়ে ঝরনা চূড়ায় ওঠার পথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।’