হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বেডে বসে মাকে আদর করছিল ছোট্ট আলভিনা (৯)। ছয় দিন পর মায়ের সঙ্গে দেখা হলো তার। বলল, ‘আমার আজ পরীক্ষা ছিল। মা অসুস্থ শুনে ছুটে এসেছি।’ একবার বলে উঠল, ‘মা, আমি আরেকটু থাকি তোমার সঙ্গে। তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।’
আলভিনা প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের মেয়ে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হেনস্তার শিকার হন, এরপর তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তার হন রোজিনা। ১৮ মে থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। আজ রোববার বিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি পান। কারাগারে যাওয়ার আগেও তিনি অসুস্থ ছিলেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁকে কারাগার থেকে এনে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে অল্প সময়ের জন্য রোজিনা ইসলামের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় প্রথম আলো। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্বামী মনিরুল ইসলাম ও একমাত্র সন্তান আলভিনা ইসলাম। প্রথম আলোকে রোজিনা বললেন, ‘আমি সেখানে (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) কাজ করতেই গিয়েছিলাম।’
ঘটনার দিন সচিবালয়ে ও থানায় রোজিনা নিজে দেখেছেন এবং পরে স্বামী ও ভাই–বোনের কাছ থেকে শুনেছেন সাংবাদিকেরা কীভাবে তাঁর মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। শিক্ষক–বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এ ছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশের সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক, সাংবাদিক নেতাসহ দেশে–বিদেশে যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রোজিনা। তিনি বলেন, ‘তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। সবাইকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোজিনা ইসলামের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তিনি খুব দুর্বল বোধ করছেন এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আছেন। তাঁকে এখনো নতুন কোনো ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। নিয়মিত যেসব ওষুধ খেতেন, সেসবই খাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন ও ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) পরামর্শক রায়হান রাব্বানীর অধীনে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে।
রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রোজিনা সুস্থ বোধ না করায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে।