দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার জন্য পদ্মা সেতুকে দেখা হচ্ছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন, ইকোপার্কের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক যাত্রী চলাচল ও বাণিজ্য যোগাযোগের বড় রুটকে সংযুক্ত করবে পদ্মা সেতু। আবার মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা হচ্ছে খুলনা বিভাগের—খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া। বরিশাল বিভাগের—বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের—গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। এর বাইরে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর ও চুয়াডাঙাও সেতুর সুবিধার আওতায় চলে আসবে বলে মনে করছে সরকার।
দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাটশিল্প, যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু হলে এই আয় আরও বাড়বে। বড় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা খুলনায় রয়েছে। শহর থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৪২ কিলোমিটার। সড়কপথে পায়রা সমুদ্রবন্দরও বেশি দূরে নয়।
পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকায় যাতায়াতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি ভারতের রেল যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগ চালুর পর সহজে ঢাকা থেকে মালামাল পরিবহন করা যাবে।
রাজধানী ঢাকা থেকে স্থানভেদে শরীয়তপুরের দূরত্ব ৬৫ থেকে ১০০ কিলোমিটার। পদ্মা নদী থাকায় ফেরি পার হয়ে ঢাকায় যেতে অনেক সময় লাগে এবং ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন সামনে রেখে আশার আলো দেখছেন শরীয়তপুরের মাছচাষিরা। দ্রুততম সময়ে তাঁদের মাছ ঢাকার বাজারে পাঠাতে পারবেন তাঁরা। এতে তাঁদের পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে, দামও পাবেন বেশি। বছরে অন্তত সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার মাছ ঢাকার বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছে শরীয়তপুরের মাছের খামারি ও মৎস্য বিভাগ। শরীয়তপুর পদ্মা-মেঘনাবেষ্টিত জেলা হওয়ায় পর্যটনশিল্পের বিকাশ কেবলই সময়ের ব্যাপার।
পদ্মার দুই পাড়ে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। বাস্তবায়িত হচ্ছে মেগা সব প্রকল্প। পর্যটনও দেখাচ্ছে অপার সম্ভাবনা। যেসব জমি একসময় কেউ নিতে চাইতেন না, এখন তারও দাম ১০ থেকে ২০ গুণ বেড়েছে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক চিত্রই পাল্টে যাচ্ছে।
পিরোজপুরের পেয়ারা, আমড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদিত শাকসবজি, মাছ, মুরগি, দুধ, ডিম এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। মহাসড়কের আশপাশে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী কলকারখানা করতে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যে জমি কিনে রেখেছে। পর্যটন খাতও অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় মানুষের আনাগোনা বাড়বে।