চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি গাণিতিকভাবে পরিমাপের বিষয় নয়। এখানে গুণগত পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। দেবাশীষ রায় বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দূরের কথা বরং ১৯৯৭ সালের চুক্তির আগের তুলনায় অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।
পাবর্ত্য চুক্তির ২৩ বছর পূর্তিতে আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী দেবাশীষ রায়। গতকাল রোববার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
অনুষ্ঠানে দেবাশীষ রায় বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে নিরাপত্তার দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা এখন নিজ ভূমে পরবাসীর মতো জীবন যাপন করছেন। আমরা আশা করি, সরকার ভূমি কমিশনকে কার্যকর করে ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তিসহ চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না থাকলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের আইন প্রণীত হলেও এর ২২ বছর পরও বিধিমালা হয়নি। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০১ সালে ভূমি কমিশনের আইন হয়েছে। ২০১৬ সালে এসে সেই আইন সংশোধনের পর আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু বিধিমালা আজও চূড়ান্ত হয়নি।’
অনুষ্ঠানে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে একের পর এক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিদিন সাঙ্গু-মাতামুহুরি রিজার্ভ ফরেস্টের শত শত গাছ কাটা, পাহাড়ি ঝিরি ও ঝরনা থেকে পাথর উত্তোলন, জমি জবরদখলের মতো উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে।
রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, প্রকৃতি ও মানুষের জীবনধারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে কোনো উন্নয়ন টেকসই হয় না। পাহাড়ে ম্রোদের জমি ও জীবিকা কেড়ে নিয়ে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প টিকতে পারবে না। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় ধস, পানিসংকট এটি প্রমাণ করে যে প্রতিবেশ পরিবেশ অনুকূল কি না, তা বিবেচনায় না নিলে উন্নয়ন টেকসই হয় না বরং ধ্বংস বয়ে আনে।
বেসরকারি সংগঠন নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির গোলটেবিল আলোচনা সঞ্চালনা করেন।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বীণা ডি কস্টা। তিনি বলেন, সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে পাহাড়ের মানুষের মনে আজ আস্থাহীনতার সংকট তৈরি হয়েছে। ২৩ বছর পরও এ চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা পাহাড়ে ভূমি দখল করছে।