লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল কুয়েতের নাগরিক হলে তাঁর আসন শূন্য হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই বিষয়ে তদন্ত চলছে। নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতি, সাংসদ শহিদ ইসলামের কুয়েতে গ্রেপ্তার ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে বক্তৃতা করেন। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করেন তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে সাংসদের কথা বলা হচ্ছে, তিনি স্বতন্ত্র সাংসদ। তিনি আাওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ওই আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাও নির্বাচন করেনি। ফলে শহিদ ইসলাম জিতে আসেন। এরপর তাঁর স্ত্রীকেও যেভাবেই হোক, সাংসদ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (শহিদ) কুয়েতের নাগরিক কি না, সেই বিষয়ে আমরা কুয়েতে কথা বলছি। সেটা দেখব। আর সেটা হলে তাঁর ওই সিট হয়তো খালি করতে হবে। কারণ, যেটা আইনে আছে, সেটা হবে। তার বিরুদ্ধে আমরা দেশেও তদন্ত করছি।’
রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকেই ধরেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। অপরাধীদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি। এই তথ্যটা অন্য কেউ কিন্তু জানায়নি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকেই এটা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখানে র্যাব গিয়েছে। এসব খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
করোনাকালে ত্রাণসহায়তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য যে তালিকা, তা তিন দফা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় নামের তথ্য মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে। সবকিছু যাচাই করে যথাযথ নিশ্চিত হয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দিচ্ছে। ভুল যেসব নাম এসেছে, সেগুলো কেটেছেঁটে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জনকারী বা আনুগত্য গ্রহণকারী সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য নন। শহিদ ইসলাম কুয়েতের নাগরিক হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি সত্যিই কুয়েতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকলে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দরকার। তিনি নিশ্চয়ই সরকারি পাসপোর্টে সে দেশে যাননি। তাহলে তিনি নিঃসন্দেহে বিদেশি নাগরিক। বিদেশি নাগরিকত্ব তিনি সারেন্ডার করেননি। তিনি নির্বাচনের সময় তথ্য গোপন করেছেন। আজকে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এ ব্যাপারে সংবিধান অনুযায়ী আপনার (স্পিকারের) যে দায়িত্ব আশা করব, আপনার জায়গা থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসবে।’
রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম সম্পর্কে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, ‘করোনাকালে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষ হচ্ছে না। রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ছয় হাজারের বেশি ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। তারা সরকারের কাছে টাকা দাবি করেছে। তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লাইসেন্স দিয়েছে। দলীয় বিবেচনায় এটা করা হয়েছে বলেই অনেক যোগ্য ও সক্ষম হাসপাতালকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এসব কারণে গোটা বাংলাদেশে আজ করোনা সংক্রমণ ঘটেছে। মানুষের জীবন-মরণের সংকটময় মুহূর্তে যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত নয়। তাদের ক্রসফায়ার দেওয়া উচিত।’
হারুন তাঁর বক্তব্যে ৫০ লাখ পরিবারকে সরকারি আর্থিক সহায়তার জন্য তালিকা তৈরিতে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে ২৮ লাখই ভুয়া। যেসব জনপ্রতিনিধি এসব তালিকা করেছেন, তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন।
এর আগে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংসদদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি দলের সাংসদ বেনজির আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারা ভুলিয়ে–ভালিয়ে সোনার হরিণের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। তাদের এই কাজের কারণে মানুষ সবকিছু হারাচ্ছেন, মারা পড়ছেন।
বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেশবাসীকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কর্মী প্রেরণ করেন, তাঁরা যদি যথাযথ নিয়মে পাঠান, তাহলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। এজেন্টদেরও যথাযথভাবে খোঁজখবর নিয়ে পাঠানো উচিত।
প্রবাসীদের জন্য নেওয়া নানা উদ্যোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে অনেকে অবৈধ হয়ে গেছেন। আসামি হিসেবে কারাগারে ছিলেন। তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা চলে এসেছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি কাজ করতে চায়, গ্রামে কিছু করতে চায়, ঋণের ব্যবস্থা আছে। ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। ৪ শতাংশ সুদে টাকা দেওয়া হবে।