খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের কোনোটিই গত পাঁচ বছরে লাভের মুখ দেখেনি। তবে ২০১৮ সালে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলে স্থাপিত পাটের লেমিনেশন ব্যাগ তৈরির ইউনিট আশা জাগাচ্ছে। ধীরে ধীরে লাভের দিকে এগোচ্ছে কারখানাটি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে সেটি দেশের পাটশিল্পে ভালো উদাহরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে যে যন্ত্র আছে, তা ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের। আর বেসরকারি পাটকলগুলোতে রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের যন্ত্র। এ কারণে বেসরকারি কারখানাগুলো লাভে থাকছে। তা ছাড়া ওই মিলগুলো ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনেও সক্ষম। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোকেও প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বহুমুখী পণ্য তৈরি করতে হবে। এমনই পরিকল্পনা থেকে ক্রিসেন্ট জুট মিলে স্থাপিত পাটের লেমিনেশন ব্যাগ তৈরির ইউনিটটি স্থাপন করা হয়েছে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের ১২ হাজার বর্গফুটের মতো জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে ইউনিটটি। কারখানার অন্যান্য ইউনিট থেকে পাটের চট নিয়ে ওই কারখানায় লেমিনেটিং করা হয়। কারখানাটির নাম দেওয়া হয়েছে প্রিমিয়ার লেমিনেশন প্ল্যান্ট (পিএলপি) ইউনিট। পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরীক্ষামূলকভাবে ওই প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে বিজেএমসি।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী পাটজাত পণ্য নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ক্রিসেন্ট জুট মিলে পিএলপি ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেএমসি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের শেষের দিকে যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের মে মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় আগস্ট মাস থেকে। ওই সময় ১০ কেজি ধানের বীজ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ১ লাখ ৫২ হাজার নেমিনেশন বস্তা তৈরির কাজ দেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ওই ব্যাগকে বলা হয় পলিকোটেড হেসিয়ান ব্যাগ। এরপর ২০১৯ সালে বিএডিসির ৪ লাখ ৪০ হাজার ও ১ লাখ ৬০ হাজারটি ১০ ও ২০ কেজি ধারণক্ষমতার ব্যাগ তৈরি করা হয় ওই কারখানা থেকে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ লাখ ২০ হাজার ব্যাগ তৈরির কাজ চলছে।
শুধু ব্যাগই নয়, পিএলপি প্ল্যান্টটিতে তৈরি হচ্ছে স্লাইভার ক্যানশিট, যা পাটকলগুলোতে সুতা রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। ওই স্লাইবার ক্যানশিট সাধারণত কারখানার সুতা বা অন্য কিছু রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি পাটকলের চাহিদা পূরণ করে এই স্লাইবার ক্যানশিট বাইরে বিক্রি করা সম্ভব বলে জানিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
ওই ইউনিটে ৩৫ থেকে ৪০ জন শ্রমিক অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁদের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী। শ্রমিকদের বেশির ভাগই ইউসেপ বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ওই ইউনিট থেকে প্রায় ২০ হাজার ব্যাগ বা বস্তা তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু কার্যাদেশ না থাকায় বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ থাকে। শুধু যদি সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর জন্যও ওই ব্যাগ বা বস্তা তৈরি করা হলে পাটশিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের উপব্যবস্থাপক (উৎপাদন) ও পিএলপি ইউনিটের ইনচার্জ মো. গোলাম রসুল বলেন, পাটশিল্পে এখন প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করা হচ্ছে ওই ইউনিটে। প্রাথমিক পযায়ে শুধু বিএডিসির পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই লেমিনেশন ব্যাগ খুবই উন্নত মানের, এর মধ্যে কোনো জলীয় বাষ্প প্রবেশ করতে পারে না। ফলে পণ্যের গুণগত মান ভালো থাকে। ওই ব্যাগ ও বস্তায় গম, ধানের বীজ, চিনি, ফিশ ফিড, পোলট্রি ফিড, সার, আটা-ময়দা ও কীটনাশক মোড়কজাত করা সম্ভব। তিনি বলেন, বর্তমানে ওই ইউনিট লোকসানে না থাকলেও খুব বেশি লাভে নেই। তবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জন্য পণ্য তৈরির কার্যাদেশ পাওয়া গেলে ইউনিটটি ভালো কিছু করতে পারবে।
বিজেএমসির খুলনার সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই। ওই ইউনিটে উৎপাদিত পণ্য বাইরে রপ্তানিযোগ্য। তাই দেশের পাশাপাশি বিদেশেও পণ্যটি বিক্রি করা গেলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর জন্য ভালো কোনো সুখবর আসতে পারে।