পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে নানা সমালোচনা অব্যাহত থাকলেও এই প্রস্তাব সমর্থন করে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন দুজন সংসদ সদস্য। তাঁরা মনে করেন, এই টাকা ফিরিয়ে এনে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো উচিত।
তবে জাতীয় পার্টির একজন সদস্য এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এ কথা বলেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাজেট আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ রাখার বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে আসছেন বিরোধী দল এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলের সংসদ সদস্যরা। তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য এই প্রস্তাবের সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন।
আজ বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিকল্পধারার সংসদ সদস্য এম এ মান্নান বলেন, নৈতিকতার দোহাই দিয়ে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করার যুক্তি নেই। অবৈধ অর্থ নিজ দেশে ফিরিয়ে আনতে সব দেশই নানা কলাকৌশল অবলম্বন করে। পাচার করা ছাড়াও দেশের বাইরে অনেকের ব্যবসা করেন, সে টাকা আছে। তিনি মনে করেন, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে এনে দেশে উন্নয়নের কাজে লাগানো উচিত।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম বলেন, অনেকে এই সুবিধা অনৈতিক বলছেন। কিন্তু যারা বিদেশে টাকা পাচার করে বিদেশি ব্যাংকে রাখেন, তাঁরা যখন বুঝতে পারবেন যে এই টাকা ব্যবহার করা যাবে না, ঘোষণা দিয়ে দেশেও আনা যাবে না, তখন এই সুযোগের ফলে কর দিয়ে টাকা নিয়ে আসতে পারবেন। তিনি বলেন, টাকা আয় করাটা নেশার মতো, এটা মাদকাসক্তির মতো নেশা। কিন্তু অনেকে এ টাকা ভোগ করতে পারেন না।
জিল্লুল হাকিম বলেন, কিছু অর্থনীতিবিদ এবং বিএনপি এই প্রস্তাবকে অনৈতিক বলছেন। খালেদা জিয়ার পরিবার বিদেশে টাকা পাচার করেছে। সে টাকা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু সব টাকা ফিরিয়ে আনা যায়নি।
অবশ্য জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাসুদ আহমদ চৌধুরী এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব অনৈতিক। এটি প্রস্তাবিত বাজেটের দুর্বল দিক। এই প্রস্তাব দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও অর্থ পাচারবিরোধী আইনের পরিপন্থী। তিনি বলেন, পিপলস লিজিং কোম্পানি হাজার হাজার গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে, এ বিষয়ে কি সরকারের কিছুই করার নেই? তিনি গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সিলেট–সুনামগঞ্জ এলাকার বন্যা পরিস্থিতিকে স্মরণকালের ভয়াবহ উল্লেখ করে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান বলেন, ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে দুঃসময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনার উৎসস্থল খননের প্রয়োজন। হাওর–জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। খালগুলো থেকে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো করা সম্ভব হলে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো যাবে।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সদস্য আ ফ ম রুহুল হক, কাজী কেরামত আলী, নারায়ণচন্দ্র চন্দ, পঙ্কজ দেবনাথ, তাহজীব আলম সিদ্দিকী, আদিবা আনজুম, হাবিবা রহমান খান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।