পোকামাকড় থেকে রক্ষায় এমনিতেক ঢেকে রাখা হয় জি নাইন কলার ছড়ি। ছবি তোলার জন্য ঢাকনা সরানো হল। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা।
পোকামাকড় থেকে রক্ষায় এমনিতেক ঢেকে রাখা হয় জি নাইন কলার ছড়ি। ছবি তোলার জন্য ঢাকনা সরানো হল। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা।

‘পাগলা চাষি’র কলার খেয়াল

বছর বিশেক আগে দেলোয়ার হোসেন যখন গাজীপুরের শ্রীপুরে গোলাপের চাষে নামলেন, তখন লোকে বলেছিল ‘পাগলা’। স্বজনেরা উপদেশ দিলেন, ‘এগুলি রাইখা ভালো কিছু করো মিয়া’। তবে তিনি থামেননি। জারবেরা, কার্নেশন, অরিয়েন্টাল লিলি, টিউলিপসহ নানান অপ্রচলিত জাতের ফুল ফুটিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। ফুলে লাভ তো করেছেনই। ২০১৭ সালে ফুলচাষি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারটাও পেয়ে যান। তাঁর কাছ থেকে কৌশল জেনে, বীজ নিয়ে অনেকেই ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি এখন কলা নিয়ে কোমর বেঁধে নেমেছেন।

দেলোয়ার হোসেনের দাবি, তিনি ‘জি–নাইন’ নামের যে জাতের কলার চাষ করছেন, তা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। এই কলার উৎপত্তিস্থল ইসরায়েল। তিনি বলেন, লক্ষ্য এখন ইউরোপ-আমেরিকায় কলা রপ্তানি করা। কাপড়-চোপড় রপ্তানি করা গেলে কলায় সমস্যা কী?

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, দেলোয়ার হোসেন পরীক্ষামূলক কলা চাষে আশানুরূপ ফল এসেছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে জি নাইন জাতের কলার চাষ এটাই প্রথম। এই জাতের কলাগুলো কৃষকের জন্য খুবই লাভজনক।

ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেল, জি–নাইন বা গ্রান্ড নাইন জাতের এই কলা যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই চিকিতা কলা নামেও পরিচিত। বিশ্বের অন্যতম ফল উৎপাদন ও বিপণনকারী সংস্থা চিকিতা ব্র্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একচ্ছত্রভাবে এই কলা বাজারজাত করে। চিকিতার নামেই পরিচিতি পেয়েছে এই কলা। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে চাষ করে তা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়।

গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামে দেলোয়ারের কলাবাগানে গিয়ে দেখা গেল, একেকটি ছড়িতে অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক বেশি কলা ধরেছে। একেকটি কলার আকার দেশের সবরী বা সাগর কলার চেয়ে বেশ বড়। বাগানের প্রতিটি কলার ছড়ি বিশেষ ধরনের প্যাকেটে মোড়ানো। কলাগুলো খেতে ভালো, রসাল ও মিষ্টি।

দেলোয়ার হোসেনের কলা বাগান।

দেলোয়ার জানান, ভারতের পুনের একটি কৃষি প্রদর্শনী থেকে খুঁজে পেতে তিন বছর আগে কিছু টিস্যু কালচার চারা তিনি নিয়ে আসেন। এই কলার ফলন অনেক বেশি। যাঁরা রাসায়নিক পদার্থের ভয়ে কলা খেতে চান না, তাঁদের জন্য এই কলা হতে পারে উত্তম বিকল্প। এর চাষে সার ব্যবহৃত হয়, কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না এবং কলার ছড়ি বিশেষ ধরনের প্যাকেট দিয়ে মুড়িয়ে পোকামাকড়মুক্ত রাখা হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এগুলোর লাইফটাইম অনেক ভালো। অর্থাৎ গাছ থেকে কলা সংগ্রহের পর এটি এক থেকে দেড় মাস ভালো থাকে। রপ্তানির জন্য কলার এই বৈশিষ্ট্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে রপ্তানি করতে হলে কলার ভালো রং আনতে হবে। এ জন্য প্রসেসিং সেন্টার প্রয়োজন জানিয়ে দেলোয়ার বলেন, প্রসেসিং সেন্টার ব্যয়বহুল বিষয়। কলা পাকানোর জন্য সেখানে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বিশেষ চেম্বার থাকে। এভাবে কলা পাকালে কলার গায়ে কোনো দাগ পড়ে না। চমৎকার হলুদ রং আসে। তখনই রপ্তানির বাজারে কদর বাড়ে। তাঁর পরামর্শ, সরকার যদি দেশের কলা উৎপাদনকারী এলাকা যেমন মধুপুর, নরসিংদী, বগুড়া, কালিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রসেসিং সেন্টার করে দেয়, তাহলে গার্মেন্টস শিল্পের পর কলা রপ্তানিও একটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতে পারে।