নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেবল সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটনশিল্পের বিকাশ হয়নি। পদ্মা সেতু চালু হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। সড়ক যোগাযোগ হবে ফেরিমুক্ত। সাশ্রয় হবে সময়ের। এ ছাড়া ঢাকা থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় যাতায়াতে কোনো ফেরি পার হতে হবে না। এতে যাতায়াতের সময় কমবে কয়েক ঘণ্টা।
শুধু কুয়াকাটা নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনও নতুন রূপে জেগে উঠবে। পাশাপাশি শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা, পাথরঘাটার হরিণঘাটা বন, সমুদ্রসৈকত, বরিশালের দুর্গাসাগর দিঘি, সাতলার শাপলাবিল, ভাসমান পেয়ারা বাজার, ভোলার চর কুকরিমুকরি, মনপুরা হতে পারে পর্যটকদের নতুন গন্তব্য।
বর্তমানে সামান্যসংখ্যক পর্যটক এসব দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে আসেন। পর্যটনকেন্দ্রিক স্থাপনাও গড়ে ওঠেনি খুব একটা। কুয়াকাটা হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রাজধানীর কাছাকাছি চলে আসবে। সারা বছর কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে।
পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দেশের পর্যটন মানচিত্র পাল্টে যাবে। রাজধানী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৯৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার। আর পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব ২৯৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার। বিভাগীয় শহর বরিশাল নগর থেকে দূরত্ব ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ছুটির দিনে অনেকে আসবেন কুয়াকাটায়।
কুয়াকাটা থেকে অল্প সময়ে সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থান—কচিখালী, কটকা সৈকত, জামতলা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবনসংলগ্ন সাগরে জেগে ওঠা দ্বীপ পক্ষীর চর, ডিমের চরে যাওয়া সহজ হবে।
খুলনা শহর থেকে নদীপথে কটকায় যেতে সময় লাগে প্রায় ১৫ ঘণ্টা, মোংলা থেকে ১২ ঘণ্টা। কুয়াকাটা থেকে কটকায় যেতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। কুয়াকাটা থেকে সকালে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা হরিণের সান্নিধ্যে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যাবে।
কুয়াকাটার পশ্চিমে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় সুন্দরবন যেমন রয়েছে, তেমনি পূর্ব দিকে রয়েছে ভোলার চর কুকরিমুকরি, ঢাল চর, চর নিজাম ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান।
কুয়াকাটার গা ঘেঁষে রয়েছে ফাতরার চর, লাল কাঁকড়ার চর, শুঁটকিপল্লি, লালদিয়ার চর, চর বিজয়, ফকিরহাট, সোনার চর, ক্র্যাব আইল্যান্ড। এখানে একেক জায়গার প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ভিন্ন।
একসময় বরিশাল-কুয়াকাটায় যাতায়াতে সাত-আটটি ফেরি পার হতে হতো। এখন সব নদীতে সেতু হয়েছে। কুয়াকাটার সব হোটেল-মোটেল মিলে এখন প্রায় সাত হাজার পর্যটকের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এক দিনে এ সমুদ্রসৈকতে ২০ হাজার পর্যটক অবস্থানের রেকর্ড রয়েছে। পর্যটকদের ভিড় সামলাতে শিগগিরই আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে নিঃসন্দেহে সুন্দরবনে পর্যটক বাড়বে।