পরীক্ষায় বসল সেই ছাত্রী

হবিগঞ্জের বাহুবলে ‘ধর্ষণের শিকার’ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল রোববার ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়।
এর আগে ধর্ষিত হয়েছে—এ অভিযোগে তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা দেয় বাহুবলের ভাদেস্বর ইউনিয়নের শাহজালাল উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। তার ছাত্রত্বও বাতিল করা হয়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত ১৯ জুলাই চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে আনেন পাশের হিমারগাঁও গ্রামের ফাতেমা বেগম। পরে তিনি ওই স্কুলছাত্রীকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাহুবলের মিরপুর বাজারে একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন উপজেলার যশপাল গ্রামের জাহির হোসেন সামছুদ্দিন ওরফে সমশের উদ্দিন। পরদিন ওই ছাত্রীকে অন্যত্র পাচারের সময় এলাকাবাসী ফাতেমা ও জাহিরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে বাহুবল থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। পুলিশ তিনজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয়। দুই আসামি কারাগারে আছেন।
ধর্ষিত হওয়ার কারণে মেয়েটিকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী তাকে আপাতত বিদ্যালয়ে যেতে বারণ করেন। মেয়েটির বাবা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে একই কথা বলা হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, মেয়েটির প্রভাব বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে। এ কারণে তাকে বিদ্যালয়ে যেতে বারণ করা হয়েছে।
বার্ষিক পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলে মেয়েটির বাবা গত ২৮ নভেম্বর বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে এলাকার বিশিষ্ট লোকজন মেয়েটির পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করলেও সে অনুমতি দেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি বাহুবলের ইউএনও মো. সাইফুল ইসলামকে জানানো হয় শনিবার রাতে। পরে গতকাল সকালে ইউএনও ওই শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হন। তাঁর নির্দেশে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষা শেষে ওই শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ে আসতে না পারায় বেশ কষ্টে তার দিন কেটেছে। তবে সে বাড়িতে পড়াশোনা করেছে। এ পরীক্ষায় সে অংশ নিতে পেরে অনেক খুশি। গতকাল ছিল ধর্ম পরীক্ষা।
ইউএনও সাইফুল বলেন, মেয়েটিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া বা কোনো অভিযোগ ছাড়া ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষককে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মেয়েটি যেসব পরীক্ষা দিতে পারেনি, সেগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে মেয়েটিকে বিদ্যালয়ে না আসতে বলা হয় এবং ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক কেউ যোগাযোগ করেনি।