মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে মাইক পম্পেওয়ের সঙ্গে আব্দুল মোমেনের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হয়। বৈঠকের পর প্রথম আলোর কাছে প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, পম্পেওয়ের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল—দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ। দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলে কেবল বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রও লাভবান হবে।
জ্বালানি খাতে অধিকতর মার্কিন বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন, এ কথা উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন জানান, ‘আমাদের ৩৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে। এর সদ্ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য আমরা চাই।’
ক্যারিবিয়ান বেসিন ইনিশিয়েটিভ নামে পরিচিত মার্কিন বাণিজ্য উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বাণিজ্য–ব্যবস্থার অধীনে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত দ্রব্য রপ্তানির সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশও একই সুবিধা আশা করে।
মাইক পম্পেও ও আব্দুল মোমেনের মধ্যকার আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সংকট। এই আলোচনা প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মর্গান ওরটাগুস এক লিখিত মন্তব্যে জানিয়েছেন, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু আশ্রয় দিয়ে যে উদারতার পরিচয় বাংলাদেশ দেখিয়েছে, মাইক পম্পেও তার প্রশংসা করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মর্গান ওরটাগুস বলেছেন, সমস্যার মূল কারণ নির্ধারণের পাশাপাশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কীভাবে একযোগে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেছেন। মাইক পম্পেও এ কথা জোর দিয়ে বলেছেন যে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব মিয়ানমারের। উদ্বাস্তুরা যাতে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি সে দেশকেই করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য সম্ভাব্য সব সাহায্যের ব্যাপারে মাইক পম্পেও তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সাহায্যের পরিমাণ ইতিমধ্যেই কমে এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘের মাধ্যমে যে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার মাত্র ১৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণদাতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এখন এক নম্বরে। রোহিঙ্গাদের প্রতি সাহায্য অব্যাহত থাকবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছেন মাইক পম্পেও।
আব্দুল মোমেন জানান, মাইক পম্পেও বাংলাদেশে অবস্থানরত উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার তাগিদ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধান সংকট রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষকের।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি পম্পেওকে বলেছি, আপনারা সে রকম শিক্ষকের ব্যবস্থা করে এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারেন।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি মাইক পম্পেওকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি যাতে একটা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন। সমস্যাটি যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, জঙ্গিবাদের প্রসারের আশঙ্কা তত বাড়বে।
আলোচনাকালে মাইক পম্পেও বাংলাদেশে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ওপর জোর দেন। আব্দুল মোমেন জানান, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই প্রশ্নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নীতি—জিরো টলারেন্স।