গাছপালার মূল্য পুনর্নির্ধারণে ১৫ কোটি টাকার অসংগতি

পদ্মা সেতু প্রকল্পে স্থাপনা নির্মাণ

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে শরীয়তপুরে স্থাপনা নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত এলাকায় গাছপালার নতুন মূল্যতালিকা জমা দিয়েছে বন বিভাগ। আগের মূল্যতালিকার চেয়ে তা ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা কম। এত বড় অঙ্কের টাকার অসংগতির এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে স্থাপনা নির্মাণের জন্য ৯৯ দশমিক ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে চিঠি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসককে। এরপর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ১ জুন জমির মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী ১৬ জুন জমির মালিকদের তালিকা ও স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করে। ঘরবাড়ি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করার জন্য সেই তালিকা ২২ আগস্ট শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগকে ও গাছপালার মূল্য নির্ধারণের জন্য সামাজিক বন বিভাগকে দেওয়া হয়।

গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগ থেকে মূল্য নির্ধারণের কাজ শেষ করে গত ডিসেম্বরে সেই তালিকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দেওয়া হয়। এদিকে অধিগ্রহণকৃত জমিতে বাড়তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় একটি চক্র পুকুর খনন এবং ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করে। এ ছাড়া নানা জাতের গাছের চারা রোপণ করা হয়। ওই জমি এক বছর আগেও ছিল পদ্মার ধু ধু বালুচর। এ নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ‘বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায় ঘর নির্মাণ, পুকুর খনন’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে ও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ তদন্ত অনুযায়ী সরেজমিন পুনঃ তদন্ত এবং যাচাই-বাছাই করে বাস্তবভিত্তিক বাজারমূল্য নির্ধারণের অনুরোধ করেন।

ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত বিভাগ তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়। আর বন বিভাগ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে আবার মূল্য নির্ধারণ করে। নতুন মূল্যতালিকা ৭ ফেব্রুয়ারি জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রথম দফায় গাছপালার মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন শরীয়তপুর সামাজিক বন ও নার্সারি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুধীর কুমার রায় দেব সিংহ। তিনি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় অধিকৃত এলাকায় গাছপালার মূল্য নির্ধারণ করেন ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা। সরকার এর সঙ্গে আরও ৫০ শতাংশ যোগ করে। সব মিলিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮ হাজার ৩৫০ টাকা। কিন্তু নতুন তদন্ত কমিটি বর্তমানে ওই গাছপালার মূল্য নির্ধারণ করে ৭ কোটি ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা। এর সঙ্গে ৫০ শতাংশ বাড়তি যোগ হয়ে মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১৮ লাখ ২১ হাজার ১০০ টাকা। এই হিসাবে নতুন তদন্তে স্থাপনারজন্য অধিগ্রহণ করা জায়গার গাছপালার মূল্য কমেছে ১৫ কোটি ২৯ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা।

বন বিভাগের তদন্ত চলাকালে ওই চক্র রাতের আঁধারে গাছ লাগাচ্ছে—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি চারজন সংবাদকর্মী ওই এলাকায় যান। এ সময় তাঁদের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় যমুনা টিভির শরীয়তপুর প্রতিনিধি কাজী মনিরুজ্জামান জাজিরা থানায় মামলা করেন। পরে ওই চক্রের সদস্য ফয়জল ঢালীর স্ত্রী লিপি আক্তার পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে চাঁদা দাবি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন। এতে চার সাংবাদিককে আসামি করা হয়।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান প্রথম আলোকে বলেন, বাড়তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় একটি চক্র অধিকৃত জায়গায় ঘরবাড়ি তুলেছে। বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে ও গাছ লাগিয়েছে। স্থাপনা ও গাছপালার মূল্য বেশি ধরা হয়েছে, এমন অভিযোগ পেয়ে বিষয়টির তদন্ত হয়েছে। গাছপালার নতুন মূল্যতালিকায় ১৫ কোটি টাকার বেশি অসংগতি ধরা পড়েছে। কেন এমন হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুর অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এনামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আগের মূল্য ও পরের মূল্যতালিকায় কেন এত বড় অঙ্কের টাকার পার্থক্য হলো, তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।