পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। এত দিন বিআরটিসির বাস ছিল না, এমন প্রায় সব জেলায় বাস চালু করতে চায় সংস্থাটি। তারা পদ্মা সেতু হয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ও নন-এসি দুই ধরনের বাসই নামাবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) সূত্র জানায়, নতুন করে কোন কোন পথে বিআরটিসির বাস চালু করা হবে, যাত্রী চাহিদা কেমন এবং কতগুলো বাস নামানো দরকার—এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল রোববার মতিঝিলে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিআরটিসি বাসের ডিপো প্রধানেরাও থাকবেন। তবে ফেরি পারাপারে চলা বাসের বাইরে নতুন ৬০ থেকে ৭০টি বাস বিভিন্ন পথে চালুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিআরটিসির পরিচালন (অপারেশন) বিভাগের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ফেরি পারাপারের মাধ্যমে ঢাকা থেকে খুলনা ও যশোর—এ দুটি পথে ১৬ থেকে ১৭টি বাস চলাচল করে। আর বরিশাল থেকে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি পর্যন্ত ১৫টি বাস চলাচল করছে। এগুলো ফেরি পার হয়ে ঢাকায় আসে না। পদ্মা সেতু চালু হলে এ বাসগুলো বরিশাল থেকে ঢাকা পর্যন্ত চালুর পরিকল্পনা আছে। এর বাইরে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুরসহ অন্যান্য জেলাতেও বাস চালু করা হবে।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বাস নামবে, এটা নিশ্চিত। তবে কতগুলো বাস নামানো দরকার এবং কোন কোন পথে চলাচল করবে, এসব বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। রোববার পথগুলো চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব জেলাতেই বিআরটিসির বাস চালুর পরিকল্পনা আছে।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, মাদারীপুরের সংসদ সদস্য ও পরিবহন শ্রমিকনেতা শাজাহান খান গত বুধবার বিআরটিসিতে এসে তাঁর জেলায় সংস্থাটির বাস চালুর প্রস্তাব দেন। অন্যান্য জেলার জনপ্রতিনিধিরাও নিজ নিজ এলাকায় বিআরটিসির বাস চাইছেন।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১৯৬টি পথে বিআরটিসির বাস চলাচল করছে। এর বাইরে কলকাতা ও আগরতলা পথেও সংস্থাটির বাস চলে। সব মিলিয়ে সংস্থাটির সচল বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০–এর মতো।
বিআরটিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি কোম্পানি নতুন বাস নামাতে চাইলে বিআরটিসির অনুমোদন লাগে। কিন্তু বিআরটিসির রুট পারমিট লাগে না। নিজেরাই ইচ্ছা করলে নামাতে পারে। তবে বেসরকারি মালিক-শ্রমিকদের বাধার কারণে অনেক রুট চালু করা যায় না। কিন্তু পদ্মা সেতু হয়ে রুট চালুর বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের আগ্রহ থাকায় সুবিধা হয়েছে।
এদিকে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলোও পদ্মা সেতু চালুর পর নতুন বাস নামাতে চাইছে। এর মধ্যে শরীয়তপুরের একটি নতুন কোম্পানি পাঁচটি পথে বাস নামানোর জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আবেদন করেছে। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বৈঠকও হয় কমিশনারের কার্যালয়ে। শরীয়তপুরের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ সূত্র। বিআরটিএ বাস রুট দেওয়ার ক্ষেত্রে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে এবং ভাড়ার হার ঠিক করে দেয়।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গাবতলী থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী বাসের অনেক কোম্পানি পদ্মা সেতু হয়ে বাস চালাতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের ঢাকা শহরের ওপর দিয়ে চলতে হবে। এখন পর্যন্ত বিআরটিএতে এ বিষয়ে আবেদন পড়েনি। বর্তমানে মাওয়া হয়ে ১৩টি পথে বেসরকারি কোম্পানির বাস চলাচলের অনুমতি আছে।