প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে টাকা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফিরে গেছে। যাদের জন্য পদ্মা সেতুর কাজ ব্যাহত হয়েছে, দুর্নীতিতে যাদের নাম এসেছে, যাদের ভূমিকা নিয়ে দুদকের তদন্ত হচ্ছে, তারা “আমার আত্মীয়” হতে পারে না।’ তাঁরা কোথা থেকে এত টাকা পেয়েছেন, সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করবে তাঁর সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা চৌরাস্তা বালুর মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
আগামী নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী। তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি বলে দাবি করেন। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে মজিবুর রহমানের নাম জড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করলেও মজিবুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘পঁচাত্তরে ঘাতকদের হাত থেকে আমরা মাত্র দুই বোন বেঁচে গিয়েছিলাম। এই বোনের সন্তান ও নাতি-নাতনি ও জামাই ছাড়া আমাদের আর কোনো আত্মীয় নাই।’
সকাল নয়টার পরে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হন। দুপুর ১২টা ২ মিনিটে তিনি সেখানে বালুর মাঠে জনসভায় উপস্থিত হন। জনসভার শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে এসেছি।’
ডিসেম্বর মাসে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার দেওয়া কর্মসূচি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস খালেদা জিয়ার পছন্দ না। কারণ এই মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে। তাই ডিসেম্বর মাসে তিনি আবার আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছেন।’
২৯ ডিসেম্বর দেশের মানুষকে ঢাকায় জড়ো হতে খালেদা জিয়ার আহ্বান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৪ মে তিনি (খালেদা জিয়া) ঢাকায় শাপলা চত্বরে সবাইকে জড়ো হতে বলেছিলেন কিন্তু জনগণ সাড়া দেয়নি। এবারও জনগণ সাড়া দেবে না। উনি ২৯ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছেন। কারণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল। সেই পরাজয়কে স্মরণ করার জন্য ২৯ ডিসেম্বর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষ, পুলিশ এমনকি গরুও হত্যা করা হয়েছে। গাছপালা ধ্বংস করে পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। একাত্তরে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের আমরা বিচারের সম্মুখীন করেছি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করেছি। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছি। আগামীতে আন্দোলনের নামে এই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, খুন করার দায়ে হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়ার বিচার করা হবে।’
এই জনসভায় ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাহ, শ্রম ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বক্তব্য দেন।
প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ ও বিদ্যালয় সরকারি করা হবে
প্রধানমন্ত্রী বেলা ১টা ২০ মিনিটে সদরপুর স্টেডিয়ামের জনসভায় পৌঁছান। সেখানে ২৩ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কলেজ ও একটি উচ্চবিদ্যালয় সরকারি করা হবে। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সব যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য বিনা জামানতে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে।
সেখানেও প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ৫ তারিখে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘৫ তারিখ ভোটকেন্দ্রে আসবেন। নির্বাচনে ভোট দেবেন। ভোট দিয়ে আপনারা খালেদা জিয়াকে বুঝিয়ে দেবেন, আপনারা শান্তি চান এবং নির্বাচনের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের নেতা নির্বাচন করতে চান।’
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি, আমার বোন রেহানা, আমাদের ছেলে-মেয়ে জয়, পুতুল, টিউলিপ, ববি, প্রিয়ন্তী ও তাদের ছেলে মেয়ে ছাড়া আমার কোনো আত্মীয় নেই।’
জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিল্পপতি এ কে আজাদ এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সালেহা মোশাররফ।
এরপর শেখ হাসিনা তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে জিটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তাঁর ভাষণ দেওয়ার কথা।
দিনের কর্মসূচি শেষে আজ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু ভবনে রাত্রিযাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামীকাল সকাল ১০টায় নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া শহীদ মিনার চত্বরে কর্মিসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। ফেরার পথে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং কলেজ মাঠ ও শ্রীনগর স্টেডিয়াম মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত দুটি আলাদা জনসভায় তাঁর ভাষণ দেওয়ার কথা।