হাসান মাহমুদের বাড়ি সাভার। সারজিনা হোসাঈন তৃমার গোপালগঞ্জ।
সাভার, গোপালগঞ্জ—দুই এলাকার মধ্যে যোগাযোগে বড় বাধা প্রমত্ত পদ্মা। কিন্তু এ বাধা আর থাকছে না।
দুদিন বাদেই পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। তখন চাইলেই এ সেতু দিয়ে নির্বিঘ্নে যাওয়া-আসা করা যাবে।
এখন সবার চোখ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন গণনার দিকে। হাসান ও তৃমার দিন গণনা অবশ্য অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনটির জন্য তাঁরা অনেকটা আকুল হয়ে অপেক্ষা করে আসছেন।
হাসান-তৃমার এমন অপেক্ষার পটভূমি জানতে ফিরে যেতে হবে বছর দশেক আগে। তখন দুজনের মধ্যে পরিচয়-জানাশোনার পর মন দেওয়া-নেওয়া হয়।
প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে হাসান কিছুটা মজা করে তৃমাকে বলেছিলেন, ফেরিতে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বিয়ে করাটা কঠিনই হয়ে যাবে।
তারপর হাসান-তৃমার চোখের সামনে পদ্মার বুকে গড়ে উঠতে থাকে স্বপ্নের সেতু। একের পর এক যখন স্প্যান বসানো হচ্ছিল, তখনই হাসানের মাথায় একটা দারুণ ‘আইডিয়া’ আসে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনই বিয়ে করবেন। তৃমাকে জানালে তিনিও রাজি হয়ে যান।
হাসান-তৃমার সম্পর্কের কথা উভয় পরিবার জানে। কবে তাঁরা বিয়ে করবেন, সে বিষয়ে দুই পরিবারের সদস্যরা তাড়া দিচ্ছিলেন। বিয়ের তারিখ নিয়ে পরিকল্পনার কথা পরিবারকে জানান হাসান ও তৃমা। পরিকল্পনা শুনে উভয় পরিবার বেঁকে বসে।
হাসান বলেন, ‘অভিভাবকদের চাপ সত্ত্বেও আমি আমার পরিকল্পনায় অটল থাকি। বলা যায়, বিয়েটা ঠেকিয়ে রাখি। আমাকে সমর্থন দেয় তৃমা।’
তৃমা বলেন, ‘আমরা দুজনেই একটা কথা ভেবেছি। আমরা একটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি। তাই আমরা আমাদের বিয়েটা স্মরণীয় করে রাখার পরিকল্পনায় স্থির থাকি।’
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর সবশেষ স্প্যান বসানো হয়। স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মার দুই পাড় যুক্ত হয়ে যায়। হাসান-তৃমা জুটির চোখে-মুখে বয়ে যায় খুশির ঝিলিক। এবার দুজনের জীবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করার পালা। পারিবারিক পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতাগুলো ধীরে ধীরে এগোতে থাকে।
গত ২৪ মে আসে বহুকাঙ্ক্ষিত ঘোষণা। ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। হাসান-তৃমার কাছে এ ঘোষণা তাঁদের বিয়ের তারিখ হয়ে আসে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনে চলে জোর প্রস্তুতি। হাসান-তৃমার বিয়ে ঘিরেও এগিয়ে চলে সব আয়োজন।
১৪ জুন সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো পুরো পদ্মা সেতু আলোকিত হয়। ১৭ জুন সন্ধ্যায় হাসানের গায়েহলুদ হয়।
হাসানের গায়েহলুদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ঘনিষ্ঠজন সজীব মিয়া লিখেছেন, ‘পদ্মা সেতুতে যত দিন পাবলিক পরিবহন না চলছে, তত দিন কবুল না বলার সিদ্ধান্তে অটল ছিল হাসান ভাই। পদ্মা সেতুর আলো জ্বলেছে, এবার আলো জ্বলল হাসান ভাইয়ের হলুদ-সন্ধ্যার!’
তৃমার গায়েহলুদ হবে ২৪ জুন ঢাকায়। সে জন্য এখন চলছে প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতির মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হাসান তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ২৫ জুন বিয়ের পরিকল্পনা করেছি। সবার আশীর্বাদ প্রত্যাশা করছি।’
ফেসবুক পোস্টে বিয়ের কার্ড জুড়ে দিয়েছেন হাসান। কার্ড অনুযায়ী, বিয়ে ২৫ জুন। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা ১ জুলাই।
কার্ডের বাঁ দিকে হাতে আঁকা একটি চিত্রকর্ম রয়েছে। গ্রামীণ পরিবেশে বিয়ের চিত্রকর্মটি এঁকেছেন তৃমা।
কার্ডে লেখা রয়েছে, ‘আমাদের এই যৌথ জীবনের জন্য শুধু আশীর্বাদ ও ভালোবাসা কাম্য।’
কার্ডের নিচের অংশের ওপাশ-ওপাশজুড়ে রয়েছে পদ্মা সেতুর প্রতীকী অলংকরণ। হাসান বলেন, ‘বিয়ের কার্ডের ধারণাটি আমার। একটা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কার্ড করিয়েছি। কার্ডে ঐতিহ্যবাহী জামদানি ব্যবহার করেছি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনকে কেন্দ্র করে আমাদের বিয়ের পরিকল্পনা। তাই কার্ডে পদ্মা সেতুর প্রতীকী অলংকরণ রাখা হয়েছে। এই কার্ড সেতুবন্ধনের বার্তা দেয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতক করেছেন হাসান। স্নাতকোত্তর করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে পড়ালেখা শেষ করে তৃমা একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু সংযোগের মাধ্যম। এই সেতু সাহস, দৃঢ়তা, বিজয়ের প্রতীক। আমাদের প্রেম থেকে পরিণয়ের দীর্ঘ যাত্রা সাহস-দৃঢ়তা-বিজয়েরই আখ্যান হতে যাচ্ছে।’