সেতুতে রেলপথ তৈরি হয়ে গেছে। ১৯২ কংক্রিটের স্ল্যাব বসলেই যানবাহনের পথ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর কাজ আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে চায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। তারা বলেছে, এই সময়ের মধ্যে পিচ ঢালাইসহ পুরোপুরি যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে সেতু। সড়কবাতি ও আলোকসজ্জার কাজও শেষ হয়ে যাবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৮ জুন মূল সেতুর কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিইসি। এতে কখন কোন কাজ শেষ হবে, তার সময়সীমা উল্লেখ করেছে তারা। তবে তারা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বললেও আরও আগেই তা শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সেতু বিভাগ। ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। এরপরও প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর থাকবে। তবে সে সময়টা সেতুর কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা সারানো, ঠিকাদারের পাওনা মেটানোর জন্য নির্ধারিত।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, এখন মূল সেতুর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে যানবাহন চলাচলের পথ তৈরির জন্য কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো শেষ করা। ২ হাজার ৯১৭টি স্ল্যাব জোড়া দিয়ে মূল সেতুর যানবাহনের পথ তৈরি হবে। ১৯২টি কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো বাকি আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে এই কাজ শেষ করবে তারা। তবে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আগস্টের মধ্যেই এই কাজ শেষ করা সম্ভব। কারণ, প্রতি মাসে ১০০ করে স্ল্যাব বসানো যায়। গত মে মাসে ১১০টি স্ল্যাব বসিয়েছে ঠিকাদার।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। ট্রেন যাবে নিচতলা দিয়ে। মূল সেতুর (শুধু নদীর অংশ) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। মূল সেতু থেকে মাটি পর্যন্ত সংযোগ ঘটাতে তৈরি হয়েছে উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট)। দুই প্রান্তে ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে। ফলে স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হলে মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত চাইলে হেঁটেই পারাপার করা যাবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে, আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে। তবে এখন পর্যন্ত আগামী বছরের জুনে সেতুটি চালুর সিদ্ধান্ত আছে।মো. শফিকুল ইসলাম, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক
জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে, আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে। তবে এখন পর্যন্ত আগামী বছরের জুনে সেতুটি চালুর সিদ্ধান্ত আছে। তিনি বলেন, এখন চলমান কাজগুলো কারিগরিভাবে জটিল না হলেও সূক্ষ্ম। একটা কাজের সঙ্গে অন্যটা জড়িত। এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে দ্রুত কংক্রিট স্ল্যাব বসানো শেষ করা।
পদ্মা সেতুতে দুই ধরনের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে। একটি হলো যানবাহনের চলার পথ আলোকিত করতে স্ট্রিট লাইটিং; অন্যটি হলো উৎসব কিংবা জাতীয় কোনো দিবসে পুরো সেতু নানা রঙে আলোকসজ্জা করার স্থায়ী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে আর্কিটেকচারাল লাইটিং বলা হচ্ছে।
প্রকল্পের নথি অনুসারে, স্ট্রিট লাইটিংয়ের জন্য সেতুর দুই প্রান্তে বিদ্যুতের দুটি সাবস্টেশন বসানো হবে। এর মালামাল আগস্টের মধ্যে সরবরাহ সম্পন্ন হতে পারে। যানবাহন চলাচলের পথের দুই পাশে সব মিলিয়ে ৮৩৬টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেগুলো সরবরাহের কথা রয়েছে।
সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, স্ট্রিট লাইটিং করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তবে সেতুর স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ শেষ না হলে এই কাজ শুরু করা যাবে না। তাই এই কাজ শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে আগামী বছরের ৩০ এপ্রিল।
মূল সেতুতে ২ হাজার ৯৫৯টি কংক্রিটের স্ল্যাব জোড়া দিয়ে রেলপথ তৈরির কাজ গত ১২ জুন শেষ হয়েছে। এখন এর পাশ দিয়ে গ্যাসের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। এই কাজ দু-তিন মাসের মধ্যেই শেষ হতে পারে। এ ছাড়া রেলপথের মেরামত ও তদারকির জন্য হাঁটার পথ তৈরি করা হচ্ছে। এই কাজও শেষ হতে মাস দুয়েক লাগবে।
পদ্মা সেতু এবং এর দুই প্রান্তে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন বসাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়নি।