পথ দেখাচ্ছে মুন্নার 'ড্রাগন'

বাগানের গাছ থেকে ড্রাগন ফল তুলছেন তরুণ চাষি ইউসুফ আজাদ মুন্না। সম্প্রতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের আদর্শগ্রামে। প্রথম আলো
বাগানের গাছ থেকে ড্রাগন ফল তুলছেন তরুণ চাষি ইউসুফ আজাদ মুন্না। সম্প্রতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের আদর্শগ্রামে।  প্রথম আলো

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের আদর্শগ্রাম। বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। জমিতে ধান, সবজির পাশাপাশি কেউ কেউ জড়িয়েছেন তামাক চাষে। তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম তরুণ ইউসুফ আজাদ মুন্না (৩৩)। তিনি হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। চাষ করছেন ড্রাগন ফলের। এখানেই শেষ নয়, মুন্নার ড্রাগন পথ দেখাচ্ছে অন্যদের। তাঁর দেখাদেখি ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন অনেকে।

সম্প্রতি মুন্নার ড্রাগন ফলের বাগান ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ ফুট উচ্চতার খুঁটি পেঁচিয়ে উঠেছে ড্রাগন ফলের গাছ। গাছে ঝুলছে তিন থেকে চারটি কাঁচা-আধা পাকা ড্রাগন ফল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ড্রাগনের চাষপদ্ধতি জেনে নিচ্ছেন।

বাগানে কথা হয় মুন্নার সঙ্গে। তিনি বলেন, আদর্শগ্রামে নিজের ৪০ শতক জায়গাজুড়ে তিনি ২০১৬ সালে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। এর আগে তিনি কিছুই করতেন না। ছিলেন বেকার। তখন নাইক্ষ্যংছড়ি হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বিনা মূল্যে পেয়েছিলেন ১৬০টি ড্রাগন ফলের চারা। পরবর্তী সময়ে বাগানে যুক্ত করা হয় আরও ৩০টি চারা। চারা রোপণের এক থেকে দেড় বছরের মাথায় গাছে ফল আসে। গত ডিসেম্বর মাসেও সব কটি গাছে ফল এসেছে। প্রতিটি গাছে তিন থেকে চারটি ফল ধরেছে। ফল বিক্রি করে ডিসেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন। গাছের অবশিষ্ট ফল বিক্রি করে আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। বাগান সৃজনের বিপরীতে তাঁর খরচ গেছে ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

মুন্না বলেন, একটি গাছ পরিপক্ব হতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। পরিপক্ব গাছে ২৫ থেকে ৭০টি ড্রাগন ফল ধরে। পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য আসায় তিনি ড্রাগন ফলের চাষ আরও বাড়াচ্ছেন। বাজারে ড্রাগন ফলের চাহিদাও অনেক।

মুন্নার দেখাদেখি নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত জমিতে ২০১৮ সালের মে মাসে ৩৫টি ড্রাগনগাছের চারা রোপণ করেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন। এখন কয়েকটি গাছে ফুল এসেছে। ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। তিনি বলেন, এটি পরীক্ষামূলক চাষ। ফলন ভালো হলে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে নামবেন তিনি।  

উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কৃষক পলক বড়ুয়াও ড্রাগন চাষে নেমেছেন। তিনি বলেন, ড্রাগন চাষে ঝুঁকি কম, ফলের দামও বেশি দেখে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষি ব্যাংক অথবা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ড্রাগন চাষের বিপরীতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে তামাকচাষিরা ড্রাগনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম বলেন, ড্রাগন দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে জন্ম নেওয়া লতানো ক্যাকটাসগাছের ফল। বর্তমানে থাইল্যান্ড, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের উপযোগী। চার প্রকারের ড্রাগনের মধ্যে বাণিজ্যিক চাষের জন্য বাউড্রাগন-১ (সাদা) ও বাউড্রাগন-২ (লাল) উপযোগী।

নাইক্ষ্যংছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান কর্মকর্তা দুলাল দাশ বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির আশপাশে ড্রাগন চাষের সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। মুন্নার দেখাদেখি অনেকে ড্রাগন চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করা বিষয়ে কৃষি বিভাগ চাষিদের উৎসাহিত করছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন চাষ হয়। তবে উঁচু জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তিন মিটার পরপর গর্ত করে চারা রোপণ করতে হয়। বছরের যেকোনো সময় চারা রোপণ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলে ভালো। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন হয় ২০০-৬০০ গ্রাম। ১২-১৮ মাস বয়সী একটি গাছে ৫-২০টি ফল ধরে। পরিপক্ব একটি গাছে সর্বোচ্চ ৮০টি ফল পাওয়া যায়। ছাদবাগানের টবেও ড্রাগন ফল উৎপাদন করা যায়।