বাঁশখালীর উপকূলীয় পাঁচ ইউনিয়নের ১ হাজার ৯৩০ হেক্টর এলাকার মাটি লবণাক্ত। এসব এলাকার জমিতে কিছুই উৎপাদন করা যেত না। বছরের অর্ধেক সময় এসব জমি খালি পড়ে থাকত। গত তিন বছর এসব লবণাক্ত এলাকার ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে লবণ সহিষ্ণু ধান। পতিত জমিতে সোনালি ধান উৎপাদন করতে পারায় বাড়তি লাভের মুখ দেখছে কৃষক। এবার বাঁশখালীতে লবণ সহিষ্ণু ধান উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩২৫ টন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলের ছনুয়া, পুঁইছড়ি, গন্ডামারা, সরল ও শেখেরখীল এই পাঁচ ইউনিয়নের ১ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমি লবণাক্ত। লবণের কারণে এসব এলাকায় সাধারণ জাতের ধান উৎপাদন করা সম্ভব হতো না। গত তিন বছর এসব এলাকার বেশ কিছু জমিতে লবণ সহিষ্ণু ধান উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ছনুয়ার ৩৫০ হেক্টর, পুঁইছড়ির ৩২০ হেক্টর, গন্ডামারার ৫০ হেক্টর, সরলের ৮০ হেক্টর এবং শেখেরখীলের ৫০০ হেক্টর জমিতে লবণ সহিষ্ণু ধান উৎপাদন করছে কৃষকেরা। বর্তমানে এসব এলাকার ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ফলছে ২ হাজার ৩২৫ টন ধান।
ছনুয়া ইউনিয়নের কৃষক জাকের আহমদ বলেন, ১ কানি (৪০ শতক) জায়গায় লবণ সহিষ্ণু ব্রি-৪৭ জাতের ধান চাষ করেছেন তিনি। এ বছর তাঁর ১০০ আড়ি (১ আড়িতে ১০ কেজি) ধান ফলেছে। আগে বর্ষা শুরুর পর থেকে শীতের আসা পর্যন্ত এই জমি খালি পড়ে থাকত। এখন পতিত জমিতে ধান ফলছে। শীতের শেষে একই জমিতে লবণ উৎপাদন করা হয়।
পুঁইছড়ি ইউনিয়নের কৃষক আবুল মালেক বলেন, ৩ কানি জায়গায় লবণ সহিষ্ণু ধান চাষ করে ২০০ আড়ি ধান পেয়েছেন তিনি। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় ধান কম উৎপাদন হয়েছে। তবে জমি পতিত পড়ে থাকার চেয়ে এটাও অনেক ভালো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, উৎপাদিত লবণ সহিষ্ণু জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রি–৪৭, ব্রি–৫৫, ব্রি–৬৭, বিনা–৮ ও বিনা–১০। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বিনা–৮ ও বিনা–১০ জাতের লবণ সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ব্রি–৪৭, ব্রি–৫৫ ও ব্রি–৬৭ জাতের লবণ সহিষ্ণু ধানের উদ্ভাবন করেছে। এসব জাতের ধানের পুষ্টি গুণ বেশি।
তিনি আরও বলেন, এবার বাঁশখালীতে মোট ২ হাজার ৩২৫ টন লবণ সহিষ্ণু ধান উৎপাদন হয়েছে। বাঁশখালীতে সাধারণত ব্রি–৪৭ জাতের ধানটি বেশি উৎপাদন করা হয়। বিনা–৮ জাতের ধানটি অনেক বেশি লবণ সহিষ্ণু। ভবিষ্যতে এ জাতের ধান উৎপাদন করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।