পবিত্র রোজা ঘিরে পুরান ঢাকার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। ইফতার থেকে হারিয়েছে অনেক খাবার। আত্তীকরণ হয়েছে নতুন সংস্কৃতির।
রোজার দুপুরে মাটির কলসিতে পানি ভরে দড়ি বেঁধে নামিয়ে দেওয়া হতো কুয়ার ভেতর। ওপর থেকে দেখা যেত শুধু কলসির মুখ। বিকেল থেকে বারবার উঁকি দিয়ে দেখতেন আজিম বখশ। ৭০ বছর আগে বাবার সঙ্গে ঈদের জামাতে যেতেন কাগজের টুপি মাথায় দিয়ে। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে রূপলাল হাউসের পাশেই ‘ঢাকা কেন্দ্র’। সেখানে বসে আজিম বখশ স্মৃতিচারণা করে বললেন, সাত দশক আগের সেই পুরান ঢাকার পথঘাট, খাবার বা উৎসবের দৃশ্য এখন নিজের কাছেই কল্পনা মনে হয়। তবে এই পরিবর্তন হঠাৎ ঘটেনি।
পুরান ঢাকার রোজাকেন্দ্রিক সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন ঘটেছে দুটি সময়ে। দেশভাগের পর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে বেড়েছিল ঈদ উৎসবের পরিসর। স্বাধীন বাংলাদেশে বর্ধিত নগরায়ণের ফলে ভেঙেছে পরিবার ও মহল্লাকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থা। এর প্রভাব পড়েছে রোজার সংস্কৃতিতে। বাড়ির খাবার এসেছে বাজারে। বাণিজ্যিক কাঠামো তৈরি হয়েছে চকবাজারের ইফতারের। রোজা ও ঈদ ঘিরে পুরান ঢাকার সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানতে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন এখানকার বর্ষীয়ান বাসিন্দা, পঞ্চায়েতপ্রধান, ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের সঙ্গে। তাঁরা বলছেন, রোজা ঘিরে এখনকার অনেক কিছুই আর তেমন নেই, যেমন ছিল তাঁদের শৈশবে। এক মাসের রোজার প্রথম উৎসব শুরু হতো বুড়িগঙ্গা বা লালবাগ থেকে চাঁদ দেখে।
সময়মতো সাহ্রি খাওয়ানোর জন্য মাঝরাত থেকে জাগিয়ে দেওয়ার কাজটি করত কাসিদা গায়কের দল। বর্তমানে লালবাগ কেল্লার আশপাশে দু–একটি দল টিকে থাকলেও মাঝরাতে আর শোনা যায় না, ‘আল্লাহকে বান্দেকো হাম আয়ে জাগানেকো... ।’ পুরান ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের তালিকার প্রথম নামটি কাসিদা। এই আয়োজন ঘিরে হতো মহল্লাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা। রোজার সারা মাস কাসিদা গাওয়ার পর মহল্লা ও দলভিত্তিক প্রতিযোগিতার নিয়মিত আয়োজন হতো গত শতকের শেষ পর্যন্ত।
বুড়িগঙ্গার পানি তখন গরল হয়নি। আরবি শাবান মাসের শেষ দিন নদীর পাড়ে বিকেল থেকে শুরু হতো উৎসুক মানুষের জমায়েত। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে সেই ভিড়ের ভেতর অন্য শিশুদের সঙ্গে শামিল হয়ে যেতেন সূত্রাপুরের তখনকার পঞ্চায়েতপ্রধান মাওলা বখশ সরদারের বড় ছেলে আজিম বখশ। প্রথম আলোকে তিনি জানান, নদীর পাড়ে চাঁদ দেখতে যাওয়ার উৎসব দিয়ে শুরু হতো পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানো। তবে বংশাল, আগামসিহ লেনের মতো যাঁদের বাড়ি নদী থেকে দূরে তাঁদের যেতে হতো লালবাগ কেল্লায়, উঁচু ভবন থেকে চাঁদ দেখতে।
সাত দশক আগের এই চাঁদ দেখাও আসলে উৎসবের কাটছাঁট রূপ। এ আয়োজনের সরস বর্ণনা পাওয়া যায় ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত
হেকীম হাবীবুর রাহমানের ঢাকা পাচাস বারাস পাহ্লে গ্রন্থে। তিনি বলেছেন, ‘অতি শৌখিন লোকেরা নৌকার সাহায্যে মধ্যনদীতে গিয়ে চাঁদ দেখতেন। কিশোর ও যুবক সবাই যেত। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সী লোকেরা নিজের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করার জন্য অবশ্যই যেতেন...অবশেষে চাঁদ দেখা গেল। বন্দুকের গুলি ছোড়া হলো। তোপধ্বনি করা হলো। এমন সরব হলো যে বধিরও জানতে পারল যে চাঁদ উঠেছে।’ এ বর্ণনা ১৯৪৫ সালের আগের ঢাকার।
আমাদের সময় বিত্তবান পরিবার থেকে প্রতিদিন মসজিদে ইফতারি পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। মুসাফিরদের ইফতার, রাতের খাওয়া হতো মহল্লার মানুষদের পাঠানো খাবারে। পঞ্চায়েতের সরদাররা নিজের উদ্যোগে মসজিদে ইফতারি পাঠাতেন। তখনো চকবাজারের ইফতারি জনপ্রিয় কম ছিল না। কিন্তু সেসব কিনত মানুষ শখ করে। কারও বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার সময় বা বিশেষ কোনো একটি খাবার নিয়ে যেত ইফতারের জন্য। তখন রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার কথা ভাবাও সম্ভব ছিল নামো. শাহ আলম
দেশভাগের পর একটি বড় প্রসঙ্গ হয়েছিল ‘কেন্দ্রীয় ঘোষণা’। ভৌগোলিকভাবে ১ হাজার ২০০ মাইলের ব্যবধান হলেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে একই দিন থেকে রোজা শুরু হবে, তা নির্ধারিত ছিল। তাই ঘোষণা আসত কেন্দ্রীয়ভাবে। চাঁদ দেখার পর সে রাত থেকে তারাবিহর নামাজ শুরু। মসজিদ ধোয়ামোছার কাজ শুরু হতো আগেই। তবে তারাবিহর নামাজে ফরাশগঞ্জে পঞ্চাশের দশকে মুসল্লিদের কাতার মসজিদ ছাড়িয়ে রাস্তা পর্যন্ত আসত বলে জানালেন এখানকার বর্ষীয়ান বাসিন্দারা।
সময়মতো সাহ্রি খাওয়ানোর জন্য মাঝরাত থেকে জাগিয়ে দেওয়ার কাজটি করত কাসিদা গায়কের দল। বর্তমানে লালবাগ কেল্লার আশপাশে দু–একটি দল টিকে থাকলেও মাঝরাতে আর শোনা যায় না, ‘আল্লাহকে বান্দেকো হাম আয়ে জাগানেকো... ।’ পুরান ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের তালিকার প্রথম নামটি কাসিদা। এই আয়োজন ঘিরে হতো মহল্লাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা। রোজার সারা মাস কাসিদা গাওয়ার পর মহল্লা ও দলভিত্তিক প্রতিযোগিতার নিয়মিত আয়োজন হতো গত শতকের শেষ পর্যন্ত।
ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ক্বাসীদা গ্রন্থে শায়লা পারভিন লিখেছেন, ‘পুরোনো ঢাকার ক্বাসীদা শুধু ধর্মপ্রাণ রোজাদারদের আল্লাহ ভক্তি বা বিংশ শতাব্দীর রক্ষণশীল ঢাকার ধর্মীয় উৎসব ও সংস্কৃতির পরিচয়বাহী ছিল না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে মুসলিম জাতীয়তাবাদে পরিবর্তনের জন্য ব্যবহার হয়েছে।’
তবে ইতিহাসবিদ, গবেষক হাশেম সূফী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ‘ক্বাসিদার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খালি গলায় গাইতে হবে। পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে, হারমোনিয়াম দিয়েও গাওয়া হচ্ছে। ক্বাসিদা শুরু হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া আমল থেকে। এটা পুরোনো ঢাকার মুঘল আমলের ঐতিহ্য, তা নয়।’
বকশীবাজারে কাসিদা গায়ক জুম্মন মিয়ার বয়ান থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী দুই বছর পুরান ঢাকার কাসিদা প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। চুয়াত্তর সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে শুরু হয়েছিল। তবে এখন আর নেই কাসিদার সুর।
গুলগুলা আর সন্দেশ সন্তানদের জন্য তৈরি করলেও প্রায়ই আলমারির মাথায় তুলে রাখতেন কলতাবাজারের শাহ আলমের মা। প্রথম আলোকে শৈশবের স্মৃতি শোনাতে গিয়ে ৬৮ বছর বয়সী মো. শাহ আলম বললেন, ‘আমাদের সময় বিত্তবান পরিবার থেকে প্রতিদিন মসজিদে ইফতারি পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। মুসাফিরদের ইফতার, রাতের খাওয়া হতো মহল্লার মানুষদের পাঠানো খাবারে। পঞ্চায়েতের সরদাররা নিজের উদ্যোগে মসজিদে ইফতারি পাঠাতেন। তখনো চকবাজারের ইফতারি জনপ্রিয় কম ছিল না। কিন্তু সেসব কিনত মানুষ শখ করে। কারও বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার সময় বা বিশেষ কোনো একটি খাবার নিয়ে যেত ইফতারের জন্য। তখন রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার কথা ভাবাও সম্ভব ছিল না।’
ফরাশগঞ্জের আজিম বখশ বলছিলেন, স্বাধীনতার আগে রেস্তোরাঁয় বসে ইফতার বা সাহ্রির কথা ভাবা ছিল অসম্ভব। ঢাকার প্রথম রেস্তোরাঁর মধ্যে একটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি ‘ওকে’ রেস্টুরেন্ট। পাকিস্তান আমলে নাম হয় ‘মাই রেন্ডার রেস্টুরেন্ট’। ন্যাশনাল হাসপাতাল জায়গাটি কিনে নেওয়ার পর এখন আর সে খাবারের দোকানের চিহ্ন নেই। আল রাজ্জাকের মতো হোটেলের প্রচলন স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে।
সূত্রাপুরের মোহিনী মোহন দাস লেনে বসে কথা হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। যাঁদের মনে দেশভাগ–পরবর্তী স্মৃতিও আছে কিছুটা। তাঁরা বলছিলেন, অনেক খাবার হারিয়ে গেছে আর অনেক কিছু যোগ হয়েছে পরে। হারানোর তালিকায় আছে দোভাজা টেপা, ফুলুরি, রসবড়ির মতো খাবার। এর দু-একটা হোসেনি দালানে মহররমের সময় তৈরি হয়, কিন্তু প্রচলন আর নেই। কাবাবের জন্য পুরান ঢাকা বিখ্যাত হলেও চকবাজারের কিছু কাবাব আসলে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নয়। যেমন বট কাবাব আমদানি হয়েছে স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে মোহাজেররা আসায় তাদের সংস্কৃতি মিশে গেছে আদি ঢাকার খাবারের সঙ্গে। চকবাজারের ইফতারে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামে যে খাবারটি নিয়ে খুব আগ্রহ আলোচনা, সেটি আসলে দুই–তিন দশক আগেও ছিল না।
শাহ আলম বলছিলেন, মাটির কলসে পানি রেখে শীতল করার প্রচলনের সঙ্গে ছিল কাঠের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে রাখা ‘পাহাইড়া’ বরফের ব্যবহার। পঞ্চাশের দশকে রোজার সময় বিকেল হলে গলির মোড়ে মোড়ে পিস হিসেবে বিক্রি হতো সেসব। পঞ্চায়েতপ্রথার আগের কাঠামো ভেঙেছে পঞ্চাশের দশকের শেষে। তবে প্রতিটি পঞ্চায়েত নিজেদের সাধ্যমতো এখনো ইফতারের আয়োজন করে। এবারের রোজায় কলতাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে এক মাসের জন্য ১ হাজার ২০০ পরিবারকে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানালেন তিনি।
ফরাশগঞ্জের আজিম বখশ বলছিলেন, স্বাধীনতার আগে রেস্তোরাঁয় বসে ইফতার বা সাহ্রির কথা ভাবা ছিল অসম্ভব। ঢাকার প্রথম রেস্তোরাঁর মধ্যে একটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি ‘ওকে’ রেস্টুরেন্ট। পাকিস্তান আমলে নাম হয় ‘মাই রেন্ডার রেস্টুরেন্ট’। ন্যাশনাল হাসপাতাল জায়গাটি কিনে নেওয়ার পর এখন আর সে খাবারের দোকানের চিহ্ন নেই। আল রাজ্জাকের মতো হোটেলের প্রচলন স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে। ইতিহাসবিদ ও গবেষক হাশেম সূফী জানান, ‘ঢাকার ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরোনো হলেও বর্তমান পুরান ঢাকার ঐতিহ্য মোগল আমল থেকে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন শুরু হয়েছে পাকিস্তান আমলের শেষে। এ সময় রেস্তোরাঁয় খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। বাংলাদেশের জন্মের অনেক পরে শুরু হয় হোটেলে বসে ইফতারের সুযোগ। এখন বাড়ির খাবার এসেছে বাজারে।’
সাত দশক আগের এক টাকার কাগজের টুপি মাথায় দেওয়া যেত একবারই। লাল বা সবুজ রঙের সেসব টুপি ছিল শিশু–কিশোরদের জন্য। ছিল বেত দিয়ে বানানো জালি টুপি, যা এখন আর নেই। জালি টুপি বিত্তবানরা কিনে মসজিদে মুসাফিরদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। সে আমলে দরজির দোকানকে খলিফাবাড়ি ডাকার খবর জিন্দাবাহার বইয়ের বরাত দিয়ে আমাদের জানিয়েছেন পরিতোষ সেন। তবে হকার্স মার্কেট থেকে তৈরি পোশাক কিনে গায়ে দেওয়ার সুযোগ বিত্তবান পরিবারের সন্তানদের ছিল।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের পুরোনো ঢাকা: উৎসব ও ঘরবাড়ি বইয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়, ‘বাংলাদেশে দুটো ঈদ জাতীয় ধর্মোৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর, যখন থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে ঈদ এবং এখনো যা অব্যাহত ও প্রবল।’
দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্চাশের দশকে ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ উপলক্ষে বের হওয়া মিছিলের বর্ণনা পাওয়া যায় সরলানন্দ সেনের ঢাকার চিঠি বইতে। ১৯৫২ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সে চিঠিতে আছে ‘ঈদের পরের দিন বেলা প্রায় ২টার সময় চকবাজার থেকে একটি মিছিল বার হয়। এই মিছিলে লক্ষাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন। ঢাকার অধিবাসীদের সামাজিক অবস্থা, মানবজীবনের প্রতি তাদের স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি অবলম্বনে হাস্য-কৌতুকাত্মক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। পাটের স্বল্প মূল্য, ধান–চালের অতিরিক্ত মূল্য, হাসপাতালের অবস্থা আর রাস্তাঘাটের দুরবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল সে মিছিল থেকে।’
ষাটের দশকেও ধানমন্ডি এলাকায় প্রায় তেমন কিছুই ছিল না। জমজমাট সবই ছিল এখনকার পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। ফরাশগঞ্জের দুই শ বছর আগের রূপলাল হাউস এখন মসলার গুদাম। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন পুরান ঢাকার বদলে যাওয়ার ইতিহাস বলতে গিয়ে প্রথম আলোকে জানালেন, ‘বাণিজ্যিক কাঠামো রূপ পাওয়ার ফলে বদলে গেছে চল্লিশ–পঞ্চাশের দশকের রোজায় পরিবার ও মহল্লাকেন্দ্রিক রেওয়াজ। সত্তরের
দশক থেকে বদলেছে ইসলামপুর, চকবাজারের চেহারা। পাইকারি দোকান আর বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনার জমজমাট আয়োজনে এখন মুখর চকবাজার। পুরান ঢাকার বিত্তবানেরা তাদের বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করে চলে এসেছেন ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীর দিকে। ঢাকা বর্ধিত হয়েছে এর চারপাশে।’
বাহান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির পুরান ঢাকার প্রতি গলিতে রয়েছে ইতিহাস। তবে বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে খাবারের দোকানের সঙ্গে জায়গা নিয়েছে রাসায়নিক গুদাম। চলতি পথে দেখা ঘোড়ার গাড়ি আছে শুধু পুরান ঢাকাতেই। নাজির হোসেন তাঁর কিংবদন্তির ঢাকা বইতে লিখেছিলেন, ‘উত্থান-পতন ঘটলেও যে সকল প্রাচীন শহর, পুরোনো গ্রাম বা মহল্লা বহুদিন পর্যন্ত স্ব স্ব ঐতিহ্যবাহী নাম বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে, তন্মধ্যে ঢাকা শহর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
তবে বর্ধিত নতুন ঢাকার জন্মও পুরান ঢাকার ইতিহাসের স্মৃতির গাঁথুনি নিয়েই। সেসব স্মৃতি পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দাদের তাড়িত করে রোজার মাসের সাহ্রি-ইফতারে।