নানা আয়োজন আর উৎসবের আমেজে পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড় সরাসরি আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে পঞ্চগড় রেলস্টেশন চত্বরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তনগর দ্রুতযান ট্রেনের যাত্রা উদ্বোধন করেন।
এটিই দেশের সর্বোচ্চ দূরত্বের ট্রেন সার্ভিস। ঢাকা থেকে যার দূরত্ব ৬৩৯ কিলোমিটার। এই ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো।
সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকতার কারণে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অতিথিবৃন্দ সবুজ পতাকা উড়িয়ে দেন এবং হুইসেল বাজিয়ে লাল-সবুজের ১৩টি বগি নিয়ে পঞ্চগড় থেকে যাত্রা শুরু করে ফুলে ফুলে সাজানো আন্তনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি। অতিথিবৃন্দ প্রথম যাত্রীদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করেন।
এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম, পঞ্চগড়-২ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজন, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. গোলাম আজম, পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন অাহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত, পঞ্চগড় রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার মো. মোশাররফ হোসেনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ছয়টায় অতিথিরা পঞ্চগড় রেলস্টেশনে আসেন। এ সময় ঢাকঢোল বাজিয়ে তাঁদের বরণ করা হয়। পঞ্চগড়বাসীর দীর্ঘদিনে দাবি পূর্ণ হওয়ায় ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে সহস্রাধিক উচ্ছ্বসিত মানুষ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতেই উদ্বোধনী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি পঞ্চগড় রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এবং তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবির ফলে ঢাকা-পঞ্চগড়ের মধ্যে সরাসরি ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে ঢাকা-দিনাজপুর রেলপথে দ্রুতযান এবং একতা ট্রেনকে নিয়ে আসা হয়েছে পঞ্চগড় পর্যন্ত। পঞ্চগড় থেকে ঢাকা পৌঁছানোর মাঝে এই ট্রেন থামবে ২৩টি স্টেশনে। ট্রেন দুটি পঞ্চগড়-দিনাজপুরের মধ্যে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী এবং দিনাজপুর-ঢাকার মধ্যে পুরোনো সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে। এতে দিনাজপুর-পঞ্চগড় রেলপথের শাটল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেল। এ ছাড়া থাকছে না কোনো সাপ্তাহিক বন্ধের দিন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা-পঞ্চগড় রেলপথের দূরত্ব ৬৩৯ কিলোমিটার, যা দেশের সবচেয়ে দূরত্বের ট্রেন সার্ভিস। দ্রুতযান ট্রেনটি পঞ্চগড় রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে প্রতিদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট পর ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। ঢাকা থেকে দ্রুতযান ছাড়বে প্রতিদিন রাত আটটায় এবং পঞ্চগড় পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে। একতা এক্সপ্রেস পঞ্চগড় থেকে ছাড়বে প্রতিদিন রাত নয়টা। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। ঢাকা থেকে একতা এক্সপ্রেস ছাড়বে প্রতিদিন সকাল ১০টায় এবং পঞ্চগড় পৌঁছাবে রাত পৌনে নয়টায়। দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিসংখ্যা মোট ১৩। একেকটি ট্রেন প্রায় ১ হাজার ২০০ যাত্রী বহন করতে পারবে। তবে পঞ্চগড়ের মানুষের জন্য পূর্বনির্ধারিত ৩৫টি আসনই (শোভন চেয়ার) থাকছে।
পঞ্চগড় রেলস্টেশনের মাস্টার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, দ্রুতযান ও একতায় প্রতিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বার্থের ভাড়া ১ হাজার ৯৪২ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৫৩ টাকা, ননএসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ১৪৫ টাকা ও শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫৫০ টাকা।
উদ্বোধনী দ্রুতযান ট্রেনের যাত্রী মানসী রায় বলেন, ‘ঢাকা-পঞ্চগড় এই ট্রেন সার্ভিস আমাদের দীর্ঘদিনে দাবি ছিল। আজ এই দাবি পূরণ হলো এবং এই উদ্বোধনী ট্রেনের প্রথম যাত্রী হিসেবে ঢাকা রওনা দিতে পারায় আমি অনেক খুশি। এই ইতিহাসের আমিও সাক্ষী হলাম।’
আরেক যাত্রী প্রত্যুষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা কষ্ট করে ঢাকায় গেছি। এর আগে শাটল ট্রেনে দিনাজপুর যেতে হতো, সেখানে আবার ট্রেন বদল করে আন্তনগর উঠতে হতো। এতে ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে অনেকটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো। আজ থেকে আমাদের এই দুর্ভোগের অবসান হলো।’
পঞ্চগড়ের পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ আমাদের অত্যন্ত আনন্দের দিন। আমাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে যে ট্রেন সার্ভিস চালু হলো, সে জন্য পঞ্চগড়বাসীর পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে আমাদের পঞ্চগড়ের মানুষের জন্য একেকটি ট্রেনে যে ৩৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে, সেটি বৃদ্ধির জন্য দাবি করছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিটি জেলা শহর থেকে রেলপথ উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পঞ্চগড়-ঢাকা রেলপথে আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করা হলো। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এটি দৃশ্যমান হবে। এ ছাড়া পঞ্চগড় থেকে দুটি ট্রেনে যে ৩৫টি করে আসন বরাদ্দ রয়েছে, তা পরবর্তী সময়ে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।