পঞ্চগড় সদর উপজেলায় এক কৃষক ৩৫ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির স্ত্রী অপহরণের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত ৬ মার্চ সদর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ এ মামলার তদন্তে গিয়ে এক আসামির বাড়িতে ভয়ংকর কক্ষের সন্ধান পেয়েছে।
নিখোঁজ ব্যক্তির নাম তসলিম উদ্দীন (৫০)। তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের বড়কামাত এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে নিখোঁজ তসলিমের স্ত্রী লুৎফা বেগম উল্লেখ করেন, বেশ কিছুদিন আগে সদর উপজেলার বড়কামাত এলাকার দুলাল হোসেন (৪০), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), সুখদেব পাড়া এলাকার কাবিল হোসেন (৩৮), ছোট কামাত এলাকার সালাম (৪০) এবং পুরোনো পঞ্চগড়ের ধাক্কামারা-ইসলামপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন (৫০) ভারতীয় সীমান্তের একটি সীমানা পিলারের নিচ থেকে কষ্টিপাথরের মূর্তি উত্তোলনের সময় তসলিম উদ্দীন দেখে ফেলেন। এ সময় তাঁরা বিষয়টি কাউকে না বলতে তাঁকে (তসলিম) নিষেধ করেন। কিন্তু তাঁর স্বামী ওই মূর্তি চুরির বিষয়টি লোকজনকে বলে দিলে ওই পাঁচ ব্যক্তি তসলিম উদ্দীনকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মাধইপাড়া এলাকায় মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান তসলিম উদ্দীন। ওই দিন বিকেলে আনোয়ার হোসেন তসলিমের মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি পঞ্চগড় শহরের উদ্দেশে রওনা হন। এরপর থেকে পরিবারের লোকজন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছেন না এবং তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাচ্ছেন। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে কোনো সন্ধান না পায়নি পরিবার। এর কয়েক দিন পর ওই পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পঞ্চগড় সদর থানায় অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন তসলিম উদ্দীনের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, মামলা দায়েরের পর আসামিদের খোঁজ নিতে ধাক্কামারা-ইসলামপুর এলাকার অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় ওই বাড়ির একটি কক্ষে ওয়াল শোকেসসদৃশ দরজা ভেঙে ভেতরে আরেকটি কক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। ভেতরের ওই কক্ষটিতে দুটি বড় বড় গর্ত করে সেখানে দুটি ড্রাম পুঁতে রাখা হয়েছে। ড্রামগুলোর স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে রাখা। তবে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) সুদর্শন কুমার রায়ের উপস্থিতিতে তল্লাশির সময় সেখানে কোনো মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ তসলিম উদ্দীনের স্ত্রী লুৎফা বেগম বলেন, ‘আমি চাই আমার স্বামীকে উদ্ধার করা হোক এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পঞ্চগড় সদর থানার এসআই মো. আবদুল জোব্বার সরকার বলেন,‘ মামলার প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু পেয়েছি, তাতে নিখোঁজ তসলিমকে আনোয়ারের মুঠোফোন থেকে পঞ্চগড় শহরে ডেকে আনা হয়েছে। এরপর থেকেই তসলিমের মুঠোফোনটি বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি প্রত্যেক আসামির ফোনও আমরা বন্ধ পাচ্ছি। সম্প্রতি আসামিদের সন্ধান করতে গিয়ে এলাকায় আনোয়ারের বাড়িতে আমরা একটা ভয়ংকর চিত্র পেয়েছি।’