রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় সাংসদ হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
ইরফানকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগ আজ রোববার এই আদেশ দেন।
আপিল বিভাগের আজকের এই আদেশের ফলে ইরফানের কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ।
ধানমন্ডি থানার ওই মামলায় গত ১৮ মার্চ হাইকোর্ট ইরফানের জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। শুনানি নিয়ে গত ২৮ মার্চ চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন, যার ওপর আজ আপিল বিভাগে শুনানি হয়।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। ইরফানের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ।
পরে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ বলেন, ইরফানের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সব কটি জামিনযোগ্য। ইরফানকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে, কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকা ইরফানের কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ইরফান ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পরদিন ২৬ অক্টোবর সকালে বাদী হয়ে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ ধানমন্ডি মডেল থানায় মামলা করেন। ইরফানসহ চারজন ও অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।
অন্য মামলায় গত বছরের ২৭ অক্টোবর ইরফানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২৮ অক্টোবর ধানমন্ডি থানার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ধানমন্ডি থানার মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বিফল হন ইফরান। পরে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারিতে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় ইরফানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
ধানমন্ডি থানায় হওয়া মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর রাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়ি তাঁর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়িতে ছিলেন ইরফান ও তাঁর লোকজন। ওয়াসিফ নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়িটিকে থামতে ইশারা করেন। কথা বলতে চান। তখন তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন ইরফান ও তাঁর লোকজন।
ইরফান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ ও অসদাচরণের অভিযোগে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।