নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নোয়াখালীতে কোমলমতি অনেক শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে চালকের সহকারী, ঝালাই কারখানা কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকি নিয়ে ও নামমাত্র মজুরিতে কাজ করছে শিশুরা। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
নোয়াখালীর বিভিন্ন ওয়েল্ডিং কারখানায় ঝুঁকিতে কাজ করছে শিশুরা। কলকারখানা অধিদপ্তরের নিয়মনীতি ও শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে কারখানার মালিকেরা স্বল্প মজুরিতে শিশুদের দিয়ে কারখানায় কাজ করাচ্ছেন। আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন শিশুশ্রম বেড়েই চলছে। ছোট ছোট শিশু লেখাপড়া বাদ দিয়ে বেকারি কারখানা, আইসক্রিম, চা দোকান, ইটভাটা, খাবাবের হোটেলসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, হোটেল, কারখানা কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক অল্প মজুরিতে শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করাচ্ছেন। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহল জেনেও না জানার ভান করছে।
শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু। ফ্যাক্টরি আইন অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শ্রমিকেরা শিশুশ্রমিক। অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক প্রয়োজনে অনেক শিশুকে অল্প বয়সেই নানা ধরনের শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হলে তা শিশুশ্রম। বাংলাদেশে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের সার্বিক শ্রম এবং ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ। তবে নোয়াখালীসহ দেশের সর্বত্রই শিশুশ্রম চলছে শিশু অধিকার সনদকে অগ্রাহ্য করে।
শিশুশ্রম বিষয়ে প্রচলিত আইনে ন্যূনতম মজুরি অধ্যাদেশ (১৯৬১) কিশোরসহ সব শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে এবং নিয়োগকারী কর্তৃক কিশোর শ্রমিককে (১৮ বছরের নিচে) এই অধ্যাদেশের আওতায় গঠিত বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণের কম মজুরি প্রদান বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
দোকান ও স্থাপনা আইন (১৯৬৫) দোকানে বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ১২ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইন ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তির জন্য শ্রমঘণ্টাও নির্ধারণ করে দিয়েছে।
নোয়াখালীর একটি রেস্তোরাঁর মালিক জানান, তাঁর রেস্তোরাঁয় কয়েকজন কর্মরত আছে, তবে ওরা একেবারে শিশু নয়। এলাকার লোকজন অভাবের তাড়নায় হোটেলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। কাজ না দিয়েও পারা যায় না।
শিশুদের গাড়ি চালনায় নিযুক্তির বিষয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, তাঁরা তালিকা করছেন। যাদের লাইসেন্স নেই, তারা গাড়ি চালাতে পারবে না। তখন এমনিতেই শিশুরা বাদ পড়ে যাবে। তা ছাড়া অদক্ষ শিশুরা সড়কে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা বাড়বে।