নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নোয়াখালী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে সোনাইমুড়ী বাজারে এ সংঘর্ষ হয়।
আহত খোকনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ছাড়াও এ ঘটনায় উভয় পক্ষের আরও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন।
সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়, সোনাইমুড়ী বাইপাসের ১০টি পরিবহনের কাউন্টার ও চার-পাঁচটি দোকান, একটি কোম্পানির শো-রুম এবং চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে সোনাইমুড়ী থানা-পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছররা গুলিতে আহত বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ইকবাল হোসেন (৩৫) ও বিএনপি কর্মী মো. সোহেলকে (৩০) ছররা গুলিতে আহত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত অন্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক সৈয়দ কামরুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। তাঁর পিঠে পাঁচটি ও থুতনিতে একটি গুলির আঘাত দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তিনি চাইলে কিছু সময় হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় লোকজনের ভাষ্য, আজ দুপুরে সোনাইমুড়ী বাজারে নির্বাচনী শো–ডাউন করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহিম। তিনি সোনাইমুড়ী কলেজ মাঠে পথসভা করেন। এরপর বিকেল চারটার দিকে বিএনপির প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে সোনাইমুড়ী বাজারে নির্বাচনী মিছিল বের করেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির মিছিলটি সোনাইমুড়ী বাইপাস হয়ে বাজারের দিকে ঢোকার পথে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢিল ছুড়লে দুই পক্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। একপর্যায়ে পুলিশ দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া ও লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেয়।
আহত বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে বাজারে গণসংযোগ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁর মিছিলে হামলা করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা সোনাইমুড়ী থানার ওসি আবদুল মজিদ বিএনপির কর্মীদের ধাওয়া ও তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। এতে তিনিসহ দলের কমপক্ষে ১০ জন নেতা-কর্মী ছররা গুলিতে আহত হন।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁরা দুপুরে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে চলে যান। বিকেল চারটার দিকে বিএনপির প্রার্থী কয়েক শ লোক নিয়ে বাজারে উঠে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা, দলীয় একটি নির্বাচনী কার্যালয়সহ দোকানপাটে হামলা ভাঙচুর করে তাণ্ডব চালান। এতে আওয়ামী লীগের চার-পাঁচজন কর্মী আহত হন।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ বিএনপির কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, বিএনপির কর্মীরা নিজেরা নিজেরা মারামারিতে লিপ্ত হয়ে বাজারে তাণ্ডব চালিয়েছেন। পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তাঁদের পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিএনপির কর্মীরা এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল, দোকানপাট ভাঙচুর করেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন কি না, তিনি জানেন না।