শাহবাগে যখন মাস্ক পরাতে পুলিশের তৎপরতা চলছিল, তখন পাশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন ইয়ানূর বেগম। সঙ্গে আত্মীয়স্বজনের বড় বহর। তবে তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। জানতে চাইলে ইয়ানূর বেগম হেসে বললেন, হাঁপ ধরি যায় মাস্ক থাকলে, যে গরম।
চৈত্রের এই গরমে সারাক্ষণ মুখে মাস্ক রাখা অস্বস্তিকর হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে মাস্কের বিকল্প নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে। আর স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্ব যাঁদের ওপর, তাঁদের মধ্যেও উদাসীনতার ছাপ দেখা গেল।
শান্তিনগর ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে মাস্ক পরায় উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু হয় রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। তার ঘণ্টা দেড়েক পর বক্সের কাছে তিন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেল। প্রথম জনের মুখে আঁটসাঁট মাস্ক, দ্বিতীয় জনেরটা চোয়ালে ঝুলছিল। তৃতীয় জনের মুখে মাস্ক ছিল না। জানতে চাইলে তিনি ইউনিফরমের ভেতর থেকে মাস্ক বের করলেন।
‘স’ আদ্যক্ষরের ওই পুলিশ সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলিস্তানে যখন ডিউটি করি, ঘণ্টায় এক হাজার মানুষের ঘষা খাওয়া লাগে। আগের বার যখন হয়নি, এবারও করোনা ধরবে না।’ বাসায় ফিরে কী করেন, পরিবারের সদস্যদের জন্যই বা নির্দেশনা কী তাঁর? এমন প্রশ্নে বলেন, বাসায় গিয়েই ভালো করে হাত ধুয়ে নেন। গোসল করেন। বাসার সবাইকে বলেছেন, মাস্ক ছাড়া কেউ যেন বের না হয়। তাহলে নিজে কেন মানছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে মাস্ক পরেন। একটু জিরাচ্ছিলেন, তাই খুলে রেখেছেন।
এক বছর আগে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছিল। নিয়ম মানাতে পথে–ঘাটে পুলিশও নেমেছিল। তাতে ফলও দেখা দিয়েছিল। মাঝে সংক্রমণের নিম্নগতিতে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে দেখা দেয় উদাসীনতা। আর এখন সংক্রমণ আবার দৈনিক ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছ। আর সে জন্য মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আজ থেকে সারা দেশে ফের মাঠে তৎপর হয়েছে পুলিশ।
প্রথম দিনে মাস্ক বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ফুল হাতেও দেখা গেছে পুলিশকে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) কৃষ্ণপদ রায় শান্তিনগরে মাস্ক বিতরণ করে বক্তব্যও দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাব ঊর্ধ্বমুখী। আইজিপি স্যার আজ থেকে সারা দেশে করোনাবিরোধী ক্যাম্পেইন শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে আমরা আজ সমবেত হয়েছি।’
তবে এতে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, তেজগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ ও শান্তিনগর ঘুরে মানুষের সাড়া ততটা দেখা যায়নি। শান্তিনগরে টিসিবির ট্রাক থেকে চাল, ডাল, তেল বিক্রি করছিলেন যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগের মুখেই মাস্ক ছিল না। ছিল না সারবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতাদের অনেকেরও।
পান–সিগারেটের দোকানি মোহাম্মদ জাকির হোসেন নিজের মাস্কটি পকেটে পুরে রেখেছিলেন। কর্ণফুলী মার্কেটের কর্মী নাজমা বেগম বললেন, তিনি রেখে এসেছেন মার্কেটে। রাস্তার ওপার থেকে এসেছেন, বাজার করেই এক ছুটে মার্কেটে ফিরে যাবেন।
মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় দুপুরের দিকে এনা পরিবহনের কাউন্টারের টাঙানো নতুন নোটিশ ও পোস্টার চোখে পড়ে। তাতে সব ড্রাইভার, সুপারভাইজার, স্টাফদের মাস্ক পরে থাকতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়। যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া কাউন্টারে থাকা কিংবা বাসে ওঠা যাবে না। সেখানে মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে টিকিট কাটছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র দাশ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবেন।
অভিযান শুরু হলেও প্রথম দিনে কিছুটা নরমই ছিল প্রশাসন। শাহবাগে দুপুরের আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিন বলে জরিমানা করা হয়েছে কম। তা ছাড়া বেশির ভাগ মানুষের কাছেই মাস্ক ছিল।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসন জানায়, রোববার ৫টি উপজেলা এবং মহানগরের মোট ১৫টি জনবহুল জায়গায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান চালান। তাঁরা দুই হাজার মাস্ক বিলি করেছেন। তা ছাড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ২৩৩ জনের বিরুদ্ধে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৩৬০ টাকা।