নীলফামারীতে সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতা-কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার ছয় বছর পালিত হলো গতকাল শনিবার। ওই ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল, তার বিচার শুরু হয়নি আজও। এরই মধ্যে প্রতিবছরের মতো গতকাল পালিত হলো স্মরণানুষ্ঠান ও দোয়া কর্মসূচি। রামগঞ্জ ট্র্যাজেডি নামে দিনটিকে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিবছর স্মরণ করে থাকেন।
গতকাল শনিবার স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে রামগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। এতে সভাপতিত্ব করেন টুপামারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি একরামুল হক শাহ। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, সহসভাপতি হাফিজুর রশীদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার।
সকালে নেতা-কর্মীরা নিহত চার নেতা-কর্মীর সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তাঁরা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক বলেন, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার রাতে জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ও পলাশবাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপি। ১৪ ডিসেম্বর সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। ফেরার পথে বিকেলে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে তাঁর গাড়িবহরে হামলা চালান জামায়াত-বিএনপির সদস্যরা। ওই হামলায় সাংসদ নূর প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের চার নেতা-কর্মী নিহত হন।
সেদিনের নিহত নেতা-কর্মীরা হলেন টুপামারী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, টুপামারী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন শাহ ও তাঁর ছোট ভাই মুরাদ হোসেন শাহ এবং আওয়ামী লীগের কর্মী লিটন হোসেন।
মামলার অগ্রগতি নেই
এদিকে নিহত নেতা-কর্মীদের স্বজনদের অভিযোগ, আলোচিত ওই হত্যার ঘটনায় মামলা করার ছয় বছর পেরোলেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। আসামিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে দম্ভের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলার বাদী নীলফামারী সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আকতার বর্তমানে বদলিজনিত কারণে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জে আছেন। মুঠোফোনে গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার রাতেই তিনি বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেছিলেন। সেখানে সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে করা হয় প্রধান আসামি। তিনিসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তিকে। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১১ মার্চ ২০৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলায় এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি।
তিন আসামির লাশ উদ্ধার
মামলা করার পর তিন আসামির ‘গুলিবিদ্ধ’ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁদের একজন প্রধান আসামি গোলাম রাব্বানী। ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি সকালে জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের নীলফামারী-ডোমার সড়কের গোচামারী সেতুর কাছ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। বাকি দুজনকে মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল পুলিশ।