ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে আসার দেড় মাসের মাথায় পেপারবুক ছাপার পর্যায়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) টাইপের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পাঁচটি ভলিউমে এতে পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪ হাজার ৪৯২। পেপারবুক প্রস্তুতের পর তা ছাপানোর জন্য ১৫ ডিসেম্বর সরকারি ছাপাখানায় (বিজি প্রেসে) পাঠানো হয়।
ওই মামলায় গত ২৪ অক্টোবর রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ফেনীর নুসরাতকে হত্যার দায়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় গত ২৯ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্সের জন্য নুসরাত হত্যা মামলার রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছায়, যা ১৪০/১৯ নম্বর ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগারে থেকে জেল আপিল করতে পারেন। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও আবেদন একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। তবে ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক প্রস্তুত করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুসারে নুসরাত হত্যা মামলায় দণ্ডিত আসামিরা সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক ১৬টি জেল আপিল এবং ১২টি আপিল করেছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উম্মে সুলতানা, নুর উদ্দিন ও জাবেদ হোসেন রয়েছেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়। অগ্নিসন্ত্রাসের এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
এ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।