ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি হত্যা মামলার মতো রায় চান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মা-বাবা। নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোর কাছে ওই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ঝোপ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে আমি খুশি। আমিও চাই আমার মেয়ে হত্যা মামলার রায় এমনই হোক।’
ইয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেড় বছর ধরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোনো খোঁজ রাখেন না। আমরা অসহায় মানুষ। আমাদের কথা কে শুনবে?’
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গরিব মানুষ দেইখখ্যা আমাদের মামলা নড়ে না। অপরাধী শনাক্ত হয় না। আল্লাহ যদি সহায় হোন, তবে একদিন সরকার বিচার করবে। সেই আশা নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। এখন সিআইডি অফিসে যাব। ওরা গত দেড় বছর কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না।’
তনুর পরিবারের অভিযোগ ও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মেদ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ডিএনএ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। সেটি ঢাকায় ল্যাবে আছে। মামলার তদন্ত চলছে। থেমে নেই।’
তনুর মা-বাবা দাবি করেছেন, দেড় বছর ধরে আপনি তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করছেন না। জবাবে সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘এটা ঠিক না। তদন্তের কাজে যখনই তাঁদের প্রয়োজন হবে তখনই ডাকব। দেখা করব।’
>২০১৬ সালের ২০ মার্চ তনুর লাশ উদ্ধার
হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়
এ পর্যন্ত তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল
তনুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
পরের দিন বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল করা হয়।
২০১৬ সালের ২১ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলামকে। ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্ত দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মঞ্জুর আলমকে। একই বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তদন্ত করেন।
তবে ওই বছরের ১৬ মে তনুর পোশাকে পাওয়া বীর্য পরীক্ষা করে তিনজনের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে বলে সিআইডি জানায়। এরপর তনুর পোশাকে পাওয়া তিনটি ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সন্দেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তির ডিএনএ মেলানো হয়। এতে কোনো ফল আসেনি।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকজনের সঙ্গে ডিএনএ মেলানোর উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে তনুর নাট্য সংগঠনের ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের পাঁচজন নাট্যকর্মীর সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হয়।