‘আমাকে চিকিৎসা দেন, আমাকে বাঁচান’ বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে জবানবন্দি দিয়ে এ আকুতি জানিয়েছিলেন সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান।
গতকাল বুধবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল ইসলাম এ সাক্ষ্য দেন।
গতকাল ওবায়দুল ছাড়াও আরও সাক্ষ্য দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসা কর্মকর্তা এ কে এম মনিরুজ্জামান, একই বিভাগের স্টাফ নার্স অর্চনা পাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। এ নিয়ে নুসরাত হত্যা মামলায় ৯২ জনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৮৪ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলো।
আসামির আইনজীবীদের জেরার মুখে ওবায়দুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘৬ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে কর্মরত ছিলাম। তখন নুসরাত জাহানের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি।’
আদালতে ওবায়দুল ইসলাম নিহত নুসরাতের জবানবন্দি পড়ে শোনান। নুসরাতের জবানবন্দিতে ছিল, ‘প্রতিদিন আমার (নুসরাত) বড় ভাই আমাকে মাদ্রাসায় নিয়ে যায় এবং নিয়ে আসে। ঘটনার দিন আমাকে মাদ্রাসায় নিয়ে এলে আমার বড় ভাইকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এরপর বোরকা ও নেকাব পরা চারজন আমাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল স্যারের বিরুদ্ধে আমার দেওয়া অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু অমি বলি, আমার মৃত্যু পর্যন্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাব।’
নুসরাত জবানবন্দিতে চিকিৎসক ওবায়দুলকে আরও বলেছিলেন, ‘একপর্যায়ে চারজন আমাকে ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করে। এ সময় গ্লাসে থাকা তরলজাতীয় কিছু আমার দিকে ছুড়ে দেয়। আর গ্লাসটা আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। ওরা আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দ্রুত চলে যায়। গত ২৭ মার্চ প্রিন্সিপাল স্যার আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমি এর প্রতিবাদ করি।’
ওবায়দুল ইসলাম আদালতে বলেন, নুসরাতের শেষ আকুতি ছিল ‘আমাকে চিকিৎসা দেন, আমাকে বাঁচান।’
আসামির আইনজীবীদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল বলেন, এ জবানবন্দি তাঁর নিজের হাতের লেখা।
আসামির আইনজীবীরা জানতে চান, কার নির্দেশে নুসরাতের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। ওবায়দুল জবাবে জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক তাঁকে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দেন।