দোরগোড়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সরব। ব্যতিক্রম ঢাকা-১৭ আসনে ২০–দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী আন্দালিভ রহমান। তাঁকে প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে তিনি প্রচারে আছেন। হামলা–মামলা এড়াতে তিনি নিয়েছেন নীরবে প্রচারণার কৌশল।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য দলের মতো জানান নিয়ে গণসংযোগ করা হচ্ছে না। তবে ভোটারদের কাছে নানান কায়দায় তিনি নির্বাচনী বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। তাঁর মতে, ভোটাররা কেন্দ্রে এলেই ভোটের কারচুপি বন্ধ করা যাবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫ ও ১৮ থেকে ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে ঢাকা–১৭ আসন গঠিত। ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৮ জন।
গতকাল বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও মহাখালী এলাকা ঘুরে কোথাও ধানের শীষের পোস্টার দেখা যায়নি। তবে এলাকাজুড়ে একটু পরপরই নৌকা, সিংহ এবং লাঙ্গলের পোস্টার। বনানীর ২৭ নম্বর রোডে বেসরকারি কর্মকর্তা তাশফিক রহমান বলেন, গত কয়েক দিনে নৌকা, সিংহের প্রচারণা চোখে পড়েছে। মহাখালীর তরুণ বাসিন্দা রিফাত হোসাইন বলেন, তিনি ধানের শীষের প্রার্থীকে মাঠে দেখেননি। তবে জাতীয় নির্বাচন যতটা না ব্যক্তিকেন্দ্রিক তার চেয়ে বেশি দলকেন্দ্রিক। ফলে প্রার্থী নয় প্রতীকেই ভোট দেয় মানুষ। বনানী সুপার মার্কেটের এক দোকানি বলেন, ‘আন্দালিভ সাহেব একদিন মার্কেটে এসে ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন।’ এই বিপণিবিতানে অবশ্য বেশ কিছু ধানের শীষের স্টিকার চোখে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এবারই প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটল। এই আসনে বিএনপির যাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তাঁদের কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে আন্দালিভ রহমানকে প্রার্থী করায় মাঠপর্যায়ে তাঁর কর্মী কম। ফলে প্রচারণায় সুবিধা করতে পারছেন না তিনি। আবার মামলার ভয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বড় অংশ ঘরছাড়া।
আন্দালিভ রহমান জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে এ পর্যন্ত গুলশান, বনানী, মহাখালী, বারিধারা, নিকেতনে তিনি গণসংযোগ করেছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার মধ্যে বাকি আছে ভাষানটেক এবং কড়াইল বস্তি। পর্যায়ক্রমে সেখানেও প্রচার চালানো হবে। বনানী এলাকায় গণসংযোগের পর ওই এলাকার তাঁর ৮০ জন কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পোস্টার লাগানোর পরই ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তাই পূর্বঘোষণা না দিয়ে তিনি নীরবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় অনলাইন মাধ্যমকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন আন্দালিভ। এই প্রার্থীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দুটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। একটিতে ঢাকা–১৭ আসনের প্রার্থী হিসেবে তিনি ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন। অন্যটিতে দেশের তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ধানের শীষের প্রচারণায় তাঁর কয়েকটি দল মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি এই প্রার্থীর স্ত্রী শেখ শায়রা রহমানও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল শনিবার শায়লা কালাচাঁদপুর এবং বারিধারায় গণসংযোগ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শায়রার প্রচারণা বেশ আলোচিত হচ্ছে।
এই নেতা ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় একই সঙ্গে বিত্তশালী এবং নিম্নবিত্তের বসবাস। নির্বাচিত হয়ে জনগণের একজন হয়ে তাঁদের সুখে–দুঃখে কাজ করে যেতে চাই।’