>
- ২০০৯ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আলোচনা শুরু
- ২০১১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ
- এরপর থেকেই ভারত তৎপর হয় এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার জন্য
- রূপপুরে ব্যবহৃত হচ্ছে রাশিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তি
- রাশিয়ার বাইরে এটি এই প্রযুক্তির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
- প্রশিক্ষণ, নির্মাণ, পরিচালনায় বাংলাদেশ চুক্তি করেছে ভারতের সঙ্গে
- রূপপুরে নির্দিষ্টভাবে রাশিয়া ও ভারতের ভূমিকা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার করপোরেশন অব ইন্ডিয়ায় (এনপিসিআইএল)। গত জুলাই পর্যন্ত তিনটি ব্যাচে মোট ১৪৩ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সর্বশেষ ব্যাচে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন ৫৫ জন। গত বছরের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির অধীনে এসব কর্মকর্তা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
আবার ভারত থেকে পরমাণু পরামর্শকেরাও বাংলাদেশের রূপপুরে আসছেন। বর্তমানে পাবনার রূপপুরে ছয়জন ভারতীয় পরমাণু বিশেষজ্ঞ পরামর্শক রয়েছেন। বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা এনপিসিআইএল প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেশটির তামিলনাড়ুর কুদানকুলামে রাশিয়ার প্রযুক্তিতে স্থাপিত ‘ভিভিইআর ১০০০’ কেন্দ্রেও সরেজমিনে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে করা পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির আওতায় এখন শুধু লোকবল প্রশিক্ষণের পর্যায় রয়েছে। ভবিষ্যতে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে ভারত অংশ নেবে। এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, লোকবল প্রশিক্ষণ ও কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব রাশিয়ার কাছে ছিল। এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গেও একটি চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। এখন এ প্রকল্পের রাশিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছে ভারত। আগে বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পে ভারতের কাছ থেকে পরামর্শসেবা নেওয়া হবে, প্রকল্পের জনবল প্রশিক্ষণে তারা সহায়তা দেবে।
ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় তৈরি। তবে এগুলো ভিভিইআর ১০০০ বা তার আগের প্রযুক্তির। রূপপুরে নির্মিতব্য কেন্দ্রটি ভিভিইআর ১২০০ তথা রাশিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তি। রাশিয়ার বাইরে এটিই এই প্রযুক্তির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
গত বছরের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। তার ওপর ভিত্তি করে এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। এ বাস্তবতায় ভারত এখন রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ, পরিচালনা, লোকবল প্রশিক্ষণ, এমনকি কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
তবে নিজ দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রি–অ্যাক্টর থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুর জন্য ভারত রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। নিজের দেশের কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের বাইরে বিশ্বের কোথাও পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের কাজের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। এখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরিতে ভারতের আণবিক শক্তি বিভাগের প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপের (জিসিএনইপি) অভিজ্ঞতা ও সেবা নেওয়া হবে। তবে এর আগেই ভারতের পরমাণু বিশেষজ্ঞরা রূপপুরে কাজ শুরু করেছেন বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
রূপপুরে ভারতের এই অংশগ্রহণ সম্পর্কে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত হবে ভারতের সহযোগিতাকে শুধু পরামর্শসেবা, দক্ষ লোকবল সহায়তা ও লোকবলের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণসেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। এর বাইরে রূপপুরে ভারত, বিশেষত কেন্দ্রের কোনো যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও কেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হলে সেটি ঠিক হবে না। আমরা যদি ভারতকে এ কেন্দ্র নির্মাণে যুক্ত করি, তাহলে দেশটির পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাবে।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ৩৫ বছর বন্ধ থাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য আলোচনা শুরু হয়। ২০১১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকেই ভারত তৎপর হয় এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার জন্য।
উচ্চপর্যায়ের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন একটি অনুরোধপত্র (নোট ভারবাল) পাঠায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এতে ভারত রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। এরপর তিন বছর বিষয়টি নিয়ে ঢাকা ও দিল্লিতে তো বটেই, এর বাইরে রাশিয়ায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা হয়।
ভারত ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশকে আবার চিঠি দিয়ে জানায়, তারা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যুক্ত হতে চায়। চিঠির সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতার ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কী ধরনের চুক্তি হতে পারে, তার একটি খসড়াও পাঠানো হয়। গত বছরের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪০ বছরের (শুরুতে ২০ বছর, তারপর আবার ২০ বছর) পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। তবে চাইলে ২০ বছর পর যেকোনো পক্ষ চুক্তি বাতিল করতে পারবে।
রূপপুরে যে কারণে ভারত
কূটনৈতিক সূত্র ও পরমাণু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত মনে করে, প্রতিবেশী কোনো দেশ সামরিকভাবে শক্তিশালী হলে তা হবে তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ভবিষ্যতে কোনোভাবেই সামরিক কাজে ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় দেশটি। সহযোগিতা চুক্তিতেও বলা হয়েছে, সামরিক কাজে কোনোভাবেই পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ভারতের আগ্রহের আরেকটি কারণ, ভারত বহুদিন ধরে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের (এনএসজি) সদস্যপদ পেতে চেষ্টা করছে। ৪৯টি দেশের এ জোটে ভারত ঢুকতে পারছে না চীনের বাধার কারণে। ভারত এনএসজিতে ঢুকলে পরমাণু পণ্য ও প্রযুক্তি খাতে লাখো কোটি টাকার বাজারে ঢুকতে পারবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যুক্ত হতে পারলে তাদের সে পথ সুগম হবে। কারণ, বাংলাদেশের রূপপুরই ভারতের বাইরে তাদের এ ধরনের কোনো প্রকল্পে প্রথম যুক্ত হওয়া।
সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনা করে এবং পরমাণুবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পে রাশিয়া শুধু ফুয়েল রড বা ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ জ্বালানি দেবে। বাকি সবকিছু ভারত করবে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রের মূল রি–অ্যাক্টর, টারবাইন নির্মাণ, কেন্দ্র পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, লোকবলের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। চুক্তির আওতায় ভারত নিজে অথবা তৃতীয় কোনো দেশ থেকে রি–অ্যাক্টর সরবরাহ করতে পারবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, পরমাণু কেন্দ্রে রি–অ্যাক্টর খুবই জটিল অংশ। এটা খুবই দুঃখজনক যে রাশিয়া ভারতকে কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি সরবরাহের সাব-কন্ট্রাক্টের (উপঠিকাদারি) কাজটি দিয়েছে। অথচ ভারতের ভিভিইআর রি–অ্যাক্টরে যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। ভারত তার নিজের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কুদানকুলামের জন্য যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে। তিনি বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সর্বোচ্চ মুনাফা করতে চায়।’
চুক্তি অনুসারে, ভারত কেন্দ্র নির্মাণ ও কেন্দ্র পরিচালনায় যুক্ত থাকবে। আবার ভারতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রের সবকিছুর বিষয়ে পরামর্শও দেবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতের সরবরাহ করা কোনো যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির মান কে যাচাই করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ভারতের কুদানকুলামে রাশিয়া নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছিল, এটি তখন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করার পর রাশিয়া ওই যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে দেয়।
তাহলে রূপপুরে রাশিয়ার ভূমিকা কী হবে? এ বিষয়ে কথা হয় গত এপ্রিলে ঢাকায় আসা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা পরমাণু করপোরেশনের (রাশিয়ান স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন বা রোসাটম) দক্ষিণ এশিয়ার গণযোগাযোগ ব্যবস্থাপক দারিয়া স্যাভজেনকোর সঙ্গে। গত ৩ এপ্রিল প্রথম আলো কার্যালয়ে তিনি বললেন, ‘রাশিয়া কোনো দেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে না।’
তবে দারিয়া স্যাভজেনকো বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে রাশিয়া। চুক্তির অংশ হিসেবে কেন্দ্রের নকশা, রি–অ্যাক্টর ছাড়াও কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ, নির্মাণ থেকে শুরু করে কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার বিষয়টি রাশিয়া দেখবে।
কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি এবং তার সূত্রে করা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পরমাণু কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। ভারত তৈরি করে না—এমন যন্ত্র তারা তৃতীয় কোনো দেশ থেকে এনে দেবে। এ বিষয়ে রাশিয়ার মত জানতে চাইলে দারিয়া স্যাভজেনকো বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
রূপপুরে ভারতের অংশগ্রহণের বিষয়ে গত ২ এপ্রিল দেশটির পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান শেখর বসু এবং সংস্থাটির গণযোগাযোগ কর্মকর্তার কাছে ই-মেইলে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে তাঁরা কোনো জবাব দেননি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য গঠিত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. শৌকত আকবরের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। খুদে বার্তাও পাঠানো হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। এরপরও গত মার্চ মাস থেকে একাধিকবার তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি দেখা করেননি। ফলে ভারতের সঙ্গে চুক্তির পর যেসব অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেসব বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের কোনো মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
কে দায় নেবে?
২০১১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সব দায়িত্ব রাশিয়ার হাতে থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশ-রাশিয়া-ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ফলে রূপপুরে নির্দিষ্টভাবে রাশিয়া ও ভারতের ভূমিকা কোথায় কীভাবে থাকবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়া ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। ফলে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, রূপপুর নিয়ে এ পর্যন্ত যত চুক্তি হয়েছে, সব প্রকাশ করা উচিত।
তবে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, চুক্তির কোথাও কেন্দ্রে বিপর্যয় হলে কে দায় নেবে, সেটা স্পষ্ট নেই। ফলে এ চুক্তি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তাকে দুর্বল করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কেন্দ্রের সবকিছুই যখন ভারত করবে, তাহলে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি কে নেবে, সে ব্যাপারেও অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। যদিও রাশিয়ার সঙ্গে স্পেন্ট ফুয়েল ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের পৃথক চুক্তি হয়েছে।
১৯৯৮ সালে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর থেকে ভারতের ওপর নির্দিষ্ট কিছু সামরিক পণ্য, পরমাণু প্রযুক্তি রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পরিচালনা, যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে ভারতকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অনুমোদন নিতে হবে কি না, তা জানতে ই-মেইলে আইএইএর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ বিষয়ে প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন কর্মকর্তা জেফরি ডোনোভান প্রথম আলোকে জানান, ‘দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়ে আইএইএ কোনো মন্তব্য করে না।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিসরে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকলেও ভারত রূপপুরে যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে—এমন তথ্য আপনি কোথায় পেলেন?’
‘ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তিতেই এমনটি রয়েছে’ জানালে ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু, প্রতিবেশী দেশ। আমরা শুধু ভারতের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাটুকু নেব। এর বাইরে কোনো সেবা নেব না।’ তাহলে চুক্তি নিয়ে পরে কোনো সংকট তৈরি হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত তো শত্রুরাষ্ট্র না, আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র।’