পুতুল খেলার বয়সেই শিশুটির বিয়ে ঠিক করে পরিবার। শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে শিশুটি। বিয়ের খবর শুনে অসহায় শিশুটি ছুটে যায় প্রধান শিক্ষকের কাছে। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় শিশুটি বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পায়।
গতকাল বুধবার লোহাগাড়ার চুনতি এলাকায় ১০ বছর বয়সী ওই শিশুর বিয়ে বন্ধ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহাবুব আলম। বাল্যবিবাহ দেওয়ার চেষ্টা করায় শিশুটির বাবা মোহাম্মদ আলী ও নাসির মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। নাসির মিয়াকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক ওসমানুল হক বলেন, গত মঙ্গলবার ওই ছাত্রী বিদ্যালয়ে এসে তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে। বিয়ের উপহার হিসেবে ছাত্রীটিকে বরপক্ষ থেকে এক জোড়া সোনার কানের দুল উপহার দেওয়া হয়েছে বলে জানায়। ছাত্রীর মুখে এই ঘটনার শুনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ইউএনওকে জানান।
ইউএনও মো. মাহাবুব আলম বলেন, বাল্যবিবাহ দেওয়ার চেষ্টা করায় শিশুটির বাবাসহ দুজনকে আটক করা হয়। দারিদ্র্যের কারণে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন বলে শিশুটির বাবা স্বীকার করেছেন। পরে মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না—এই মর্মে মুচলেকা নিয়ে বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নাসির মিয়াকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই টাকা শিক্ষা ব্যয়ের জন্য শিশুটির নামে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হবে।
সোনাগাজীতে প্রশাসন ঠেকাল কিশোরীর বিয়ে
সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি জানান, উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এক কিশোরী। গতকাল রাতে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এর আগে দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার বৈশাখী বড়ুয়া অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন।
পৌরসভার একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরী। গত মঙ্গলবার রাতে কিশোরীটির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়। বিয়ের খবর পেয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাখাওয়াত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বৈশাখী বড়ুয়া ওই কিশোরীর বাড়িতে যান। বিয়ে বন্ধের পাশাপাশি তার মা-বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে তার মা-বাবা মুচলেকা দেন।
বৈশাখী বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছাত্রী এখন থেকে বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করবে।
কনের মা ও বরের জেল
হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার দায়ে বর ও মেয়ের মাকে জেলে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার এ সাজা দেন।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ওই ছাত্রীকে জোর করে কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের প্যারাপুর গ্রামের মমিন হোসেনের (৫০) সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মেয়েটির বাবা মালয়েশিয়াপ্রবাসী। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ মেয়ের বাড়িতে যায়। থানার এসআই মো. শামছুজ্জামান মেয়ের মাকে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন। তাঁরা রাজি না হওয়ায় পুলিশ বর মমিন হোসেন, মেয়ের মা ও মেয়েকে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাঁদের ইউএনওর কার্যালয়ে হাজির করা হয়।