আজ বাঙালির মহানায়ক উত্তমকুমারের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই ভক্তকুলকে কাঁদিয়ে না–ফেরার দেশে চলে যান বাঙালির মহানায়ক উত্তমকুমার। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির শুটিং করতে করতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উত্তমকুমার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দৃষ্টিদান’। এই সিনেমার পরিচালক নিতীন বসু। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পাওয়ার পর তিনি চলচ্চিত্রে স্থায়ী আসন তৈরি করেন। এই সিনেমায় তিনি প্রথম অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। সিনেমার মাধ্যমে জনপ্রিয় জুটি উত্তম-সুচিত্রার সূত্রপাত হয় এবং তাঁরা দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এখনো উত্তম-সুচিত্রা জুটি দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়।
১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে প্রায় আড়াই শ ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তমকুমার। এর মধ্যে উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন জুটি হয়ে প্রায় ৩১টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। উত্তম-সুচিত্রা জুটি ব্যবসায়িকভাবে সফল অনেকগুলো সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘হারানো সুর’, ‘পথে হলো দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ ও ‘সাগরিকা’। উত্তমকুমার সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্রে ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ও ‘অমানুষ’–এ অভিনয় করেছেন।
উত্তমকুমার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি ‘নায়ক’ দ্বিতীয়টি ‘চিড়িয়াখানা’। তবে উত্তমকুমার নিজেকে সুঅভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন ‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবিতে। এই ছবিতে তিনি স্বভাবসুলভ অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন। ১৯৬৭ সালে ‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমাতে উত্তমকুমারের অভিনয় ছিল অসাধারণ।
১৯৬৬ সালের ৬ মে মুক্তি পাওয়া ‘নায়ক’ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিংবদন্তি নায়ক উত্তমকুমার। সিনেমায় তাঁর নাম থাকে অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। তিনি জাতীয় পুরস্কার গ্রহণের জন্য রেলপথে কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। সিনেমার সম্পূর্ণ কাহিনি বর্ণিত হয়েছে ট্রেনে। ট্রেনের রেস্তোরাঁ কারে অরিন্দমের পরিচয় হয় অল্প বয়সী সাংবাদিক অদিতি রায়ের (শর্মিলা ঠাকুর) সঙ্গে। অদিতি সিনেমার হিরোদের তেমন পছন্দ করেন না। অদিতি চেয়েছিলেন অরিন্দমের জীবনের কিছু ব্যক্তিগত বিষয় জানতে, যা তিনি তাঁর পত্রিকায় লিখতে পারেন।
কিন্তু অরিন্দম নিজের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য দেন না। এর কয়েক ঘণ্টা পর অরিন্দম অদিতিকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে বলেন। অরিন্দম তখন ছিলেন নেশাগ্রস্ত। অরিন্দম তাঁর চাকচিক্যময় জীবনের পেছনে একাকিত্ব লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো বলতে থাকেন। অদিতি অবাক হয়ে যান এটা ভেবে একটা মানুষ নিজের সঙ্গে কতটা অভিনয় করতে পারেন। অরিন্দমের খুব সাদামাটা একটা জীবন ছিল, যা তিনি কাউকে বলতে পারেন না। অরিন্দমের চারপাশে কত আলো, কত মানুষ, তারপরও দিন শেষে অন্ধকার তাঁকে ঘিরে ধরে, একাকিত্ব তাঁকে গ্রাস করে। অদিতি ভাবেন, এত কষ্ট চেপে রেখেও কত সাবলীলভাবে অভিনয় করে চলেছেন নায়ক।
সকালে ট্রেন দিল্লি স্টেশনে থামলে মিডিয়া, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ অরিন্দমকে ঘিরে ফেলেন। এত মানুষের ভিড়েও অরিন্দমের দুটি চোখ খুঁজতে থাকে অদিতিকে। যাঁর সঙ্গে তিনি তাঁর কষ্টগুলো শেয়ার করেছিলেন। অদিতির জন্য তাঁর ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু অরিন্দম দেখেন অদিতিও চলে যান অন্যের সঙ্গে বহুদূরে। নায়ক মুচকি হেসে ভাবেন, সত্যিই, এত মানুষের ভিড়ে আমি একা, বড্ড একা।