নার্স রুনুকে দিয়ে দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেওয়া হচ্ছে
ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নির্বাচিত নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

টিকা নেওয়ার আগমুহূর্তে রুনুর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভয় পাচ্ছো না তো!’

জবাবে রুনু বলেন, ‘না’।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাঁচজনকে টিকা দেওয়া হয়। এরপর আরও কিছু নির্বাচিত মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

টিকাদান কর্মসূচি শুরুর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। একই সঙ্গে টিকার মাধ্যমে করোনা মহামারি মোকাবিলার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে প্রথম সারির পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।

কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও আগামীকাল স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জেলায় ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান শুরু হবে। করোনার টিকাদান কত দিন চলবে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।

উদ্বোধনের পর দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁরাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।

করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন।

দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি যখন অনেকটাই কমে এসেছে, তখন টিকা দেওয়া শুরু হলো। তবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এখনো করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেই আছে। কোনো কোনো দেশে পুনরায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু দেশে বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো দেশে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের (ধরন) বিস্তার দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

দেশের বেশির ভাগ মানুষ করোনার টিকা নিতে আগ্রহী। তবে বড় অংশ এখনই নয়, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষার পর টিকা নিতে চায়। করোনার টিকা নিয়ে মানুষের এই মনোভাব উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে। এতে বলা হয়, ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এখনই পেলে টিকা নেবেন ৩২ শতাংশ, অপেক্ষার পর নিতে চান ৫২ শতাংশ, আর কখনোই টিকা নেবেন না ১৬ শতাংশ মানুষ। জরিপের এই ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে প্রকাশ করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকা প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করে। দেশের সব মানুষেরই টিকা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিহত করার পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক অস্ত্র হচ্ছে টিকা। আমি নিঃসংকোচে এই টিকা নেব।’

বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী সরকার তিন কোটি টিকা কিনছে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে। বেক্সিমকো এই টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। গত সোমবার এই টিকার প্রথম চালান দেশে আসে। প্রথম চালানে এসেছে ৫০ লাখ টিকা। এভাবে আরও পাঁচটি চালান আসার কথা। তার আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার হিসেবে দেশে ২০ লাখ টিকা আসে